পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অভিযোগ বাক্স স্থাপন করা হয়েছে। লাল কালিতে বড় করে লেখা- “অভিযোগ বাক্স”। নিচে লেখা- ‘পাবনা ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’। তার নিচে লেখা- ‘অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা কমিটি’। সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনা শুরু হলে, এক ছোট ভাই ছবিটি দিয়ে বললো ভাই এই ভুল নিয়ে কিছু বলবেন না? তার অনুরোধ রাখতেই আজকের এই গদ্যালাপ, তবে রসযুক্ত বটে !
ভুল আমরা সবাই করি। মানুষ মাত্রই ভুল। ভুলের ঊর্ধ্বে কেউ নই আমরা। তবুও কিছু ভুল কিছু সময় এড়িয়ে যাওয়া যায় কি? তিন লাইন লেখায় ঠিক কয়টা ভুল হলে তা ধরা উচিৎ নয়? বিষয়টি আমার অজানা। তবে এটুকু বলতে পারি ‘পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ এই নামটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে অনেক কথা শুনতে হয়েছে, এখনো হচ্ছে। তাদের অভিযোগ ‘পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’কে কেন ‘পাবনা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ লেখা হয়? কেনো পুর্নাঙ্গ নাম দেয়া হয় না, অথবা ‘পাবিপ্রবি’ কেনো লেখা হয় না ?
স্বভাবতই তখন দারস্থ হই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে। জানতে পারি প্রতিটি নিউজ হাউজের একটা নিজস্ব স্বকীয়তা রয়েছে অন্যদের থেকে আলাদা ভাবে উপস্থাপন করার। হেডলাইন বা সাবহেডে জায়গা কম থাকায় ‘পাবনা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ লেখা হয়। শুধু পাবনা নয়, যত জেলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে সবগুলোকেই জেলার নাম ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বলা হয়। যেমন- গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হেডলাইন বা সাবহেডে রাখা কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। তাই লেখা হয় গোপালগঞ্জ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বা গোপালগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়। জেলায় যদি আর কোন বিশ্ববিদ্যালয় না থাকে তবে পাবনা বিশ্ববিদ্যালয় লিখলেও বা ক্ষতি কি। তবে একটা কথা স্পষ্ট বলতে পারে হেড বা সাবহেডে সংক্ষিপ্ত রুপ লিখলেও নিউজের ভেতর মুল বডিতে কোনো স্থানে কখনই সংক্ষেপ নাম ব্যবহার করা হয়না।
যদিও আমি ফটো সাংবাদিক তবুও সব সময় মাঠে থাকার দরুন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এটাকে ভুল আখ্যায়িত করে প্রশ্নটা আমাকেই ছুড়ে বসে। অনেক সময় অফিসের নম্বর দিয়ে ভুল করার জন্য আমাদের নামে অভিযোগ দিতে বলি। কারন আমি জানি, এত কথা জনে জনে বলে বোঝানো সম্ভব নয়। তাই একটা কথা সুযোগ পেলে বলি সব সময়- “আপনারা পড়তে এসেছেন, পড়া শেষে চলে যাবেন। আমরা পাবনার মানুষ পাবনাতেই থাকবো। আবেগটা আপনাদের চেয়ে কোনো অংশে আমাদেরও কম নয়।”
ভুল আখ্যায়িত করে যে নামের জন্য প্রশ্নবিদ্ধ হতে হয় সব সময়, আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ভুলটাই চোখে পড়লো। তাই ভুলের গল্পটা ভুল করেও ছোট করতে পারলাম না। এত বড় লম্বা বিস্তর কাহীনির পর ভুলবশত ‘পাবনা ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ নামটিকে ভুল না বলে থাকাটাও অনেক বড় ভুল হবে বোধ করছি। এটা টাইপিং মিসকেট বলে ধরে নিলাম। ওহ! দুঃখিত! মিসটেক হবে আর কি। কারন মনের ভুলে পরের বর্ণ আগে বসিয়ে এমন ভুল আমিও করি।
কিন্তু তার নিচে ’অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা কমিটি’ বাক্যটিকে ভুল বাক্য বললে ভুল হবে কি? এখানে ব্যবস্থা শব্দটি বিশেষ্য পদ কিন্তু বাক্যের প্রয়োজনে তা হতে হবে বিশেষণ অর্থাৎ ব্যবস্থাপনা কমিটি। অথবা একটি অতিরিক্ত শব্দ যোগ করে যদি ’অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা সংক্রান্ত কমিটি’ লিখা যায় তবে ভুলটাও হারিয়ে যায়। অথবা একটি হাইপেন (-) যোগ করে লিখা যায়- ’অভিযোগ-প্রতিকার ব্যবস্থা কমিটি’। কারন, ‘অভিযোগ-প্রতিকার’ শব্দ দ্বন্দ্ব সমাস। সমাসবদ্ধ শব্দ একসাথে লিখতে হয় অথবা বিভ্রান্ত হলে মাঝে হাইপেন (-) বসাতে হয়।
আসলে ভুল তো ভুলই। ভুলবশতই ভুল হয়। জেনে শুনে কেউ ভুল করে না। তবে ভুল করাই হয় শেখার জন্য। আর ভুল ধরাই হয় সাবধানতার জন্য। তাই ভুল ধরা নেতিবাচক নয়, বরং ইতিবাচকই বলা যায়। কিন্তু ভুল করে তা স্বীকার না করাটা আরো বড় ভুল। আবার দেখা যায় বড় স্থানের ছোট ভুল সব সময় বড় ভুল হয়েই দাড়ায়। তাই এসব স্থানে সচেতনতার অভাব থাকাটা সবচেয়ে বড় ভুল। আর দুনিয়া জুড়েই মুল ভুল হলো অযোগ্যকে যোগ্য ভেবে দ্বায়িত্ব্য তুলে দেয়া।
পরিশেষে বলতে চাই, কিছু কথা সব সময় আমার মাথায় ঘুরপাক খায়। তাই আমি নিজেকে সব সময় অযোগ্য মনে করি। এতে ভুল কম হবার সম্ভবনা বেশি থাকে। ভেবে দেখুন তো, নিচের কথা গুলো কি ভুল?
“কারে আর মন্দ বলি
কারে ভুল মন্দ বলি
নিজেই আমি ভুল মানুষের দলে।
আমার ভুলে ভরা জীবন গাড়ী ভুল মবিলে চলে।।
ভুলে জন্ম, ভুলে মৃত্যু, ভুলে বসবাস
ভুল মানুষের ছায়ায় করি নিত্য ভুলের চাষ।।
আমি ভুল প্রতিমায় করি পুজা ভুল ঘরোনি তলে।।
আমি ভুল নিলামে বিকাই পন্য ভুলের হাট-বাজারে
আবার ভুলের ভানে ভুল করে যাই ভুলের খোলোস পরে।।
চলি ভুলের আশায় ভুল হতাশায় ভুলের মিছিলে।
আমি ভুলে, ভুলে, ভুলে থাকি ভুলের অন্ধকারে
আবার ভুলের মাঝেই খুঁজি আলো ভুলে বারে বারে।।
আমার ভুলের জীবন যাচ্ছে চলে ভুলেরই মাশুলে।।”
ওহ! ভুলবশত একটা কথা বলতেই ভুলে গেছি। সুযোগ থাকলে ওই বাক্সে প্রথম অভিযোগটা লিখে দিতাম এই বলে যে- “অভিযোগ বাক্সের ভুল সংশোধনের জন্য অভিযোগ জানাচ্ছি। আশাকরি কর্তৃপক্ষ দৃষ্টি না দিয়ে আর ভুল করবেন না।”
হাসান মাহমুদ, ফটো সাংবাদিক, প্রথমআলো