শনিবার, মে ২৪, ২০২৫
-CholtiBarta
No Result
View All Result
  • সর্বশেষ
  • পাবনা
    • পাবনা সদর
    • ঈশ্বরদী
    • আটঘরিয়া
    • চাটমোহর
    • ভাঙ্গুড়া
    • ফরিদপুর
    • বেড়া
    • সাঁথিয়া
    • সুজানগর
  • অপরাধ
  • রাজনীতি
  • বাংলাদেশ
  • পরিবেশ
  • প্রযুক্তি
  • ক্যাম্পাস
  • সাহিত্য-সংস্কৃতি
  • বিশ্ব
  • বাণিজ্য
  • খেলা
  • বিনোদন
  • জীবনযাপন
  • মতামত
  • আরো
    • ছবির বার্তা
    • ভিডিও বার্তা
-CholtiBarta
  • সর্বশেষ
  • পাবনা
    • পাবনা সদর
    • ঈশ্বরদী
    • আটঘরিয়া
    • চাটমোহর
    • ভাঙ্গুড়া
    • ফরিদপুর
    • বেড়া
    • সাঁথিয়া
    • সুজানগর
  • অপরাধ
  • রাজনীতি
  • বাংলাদেশ
  • পরিবেশ
  • প্রযুক্তি
  • ক্যাম্পাস
  • সাহিত্য-সংস্কৃতি
  • বিশ্ব
  • বাণিজ্য
  • খেলা
  • বিনোদন
  • জীবনযাপন
  • মতামত
  • আরো
    • ছবির বার্তা
    • ভিডিও বার্তা
No Result
View All Result
-CholtiBarta
No Result
View All Result

টাইটান-কাহিনীর আদ্যোপান্ত

cholti barta by cholti barta
জুন ২৩, ২০২৩
in বিশ্ব, মতামত, সর্বশেষ
0 0
0
Home বিশ্ব

টাইটান-কাহিনীর আদ্যোপান্ত চলুন জেনে নেয়া যাক। তার আগে বলে নিই- টাইটানের অক্সিজেন ২২ জুনই শেষ হয়ে যায়, তবে তার আগেই বিস্ফোরণে যাত্রীদের মৃত্যু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। টাইটানিকের কাছেই ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছে টাইটানের।

RELATED POST

কে ছিলেন শহীদ এ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন, যার নামে ছিল পাবনা জেলা স্টেডিয়াম!

পদ্মা নদীর বালু মহালের দখল নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ; গুলিবিদ্ধ ৭

     এবার একদম শুরু থেকে বলি। মানুষের শখ বলে কথা। কারও শখ হাজার টাকা, কারও লাখ টাকা, কারও বা কোটি টাকা। আমাদের টাইটান-ঘটনার ক্ষেত্রে শখের দাম জনপ্রতি আড়াই কোটি টাকা। টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দর্শনের এই মিশনের স্থায়িত্বকাল আট দিন, টাকা গুণতে হয় আড়াই লাখ মার্কিন ডলার, মানে আড়াই কোটি টাকার বেশি।

     প্রথম যাত্রাতেই এক হিমশৈলের সাথে বাড়ি খেয়ে টাইটানিক ডুবে গিয়েছিল ১৯১২ সালের ১৫ এপ্রিল, ডুবে যাওয়ার জায়গাটা কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ডের তীর থেকে ৬৯০ কিলোমিটার দূরে, সাড়ে বারো হাজার ফুট বা ৩.৮১ কিলোমিটার নিচে। ১৯৮৫ সালে এই ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করা হয়। টাইটানিক জাহাজখানা যে দুটো টুকরো হয়ে গিয়েছিল সেটা মোটামুটি সবারই জানা; টুকরো দুটো একে অন্যের থেকে ২০০০ ফুট দূরে পড়ে আছে। আর এই দু’ টুকরো দেখার জন্যই এত আয়োজন।

     এই প্রাইভেট ট্যুরের আয়োজন করে থাকে ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক সাবমেরিন কোম্পানি ওশানগেইট ইনকরপোরেটেড (ওশানগেইট এক্সপেডিশন্স)। তবে ২০০৯ থেকে নয়, ২০২১ সাল থেকে টাইটানিক দর্শন প্যাকেজ অফার করা শুরু করে ওশানগেইট। উদ্দেশ্য ছিল, স্পেসএক্স বা ব্লু অরিজিন যেমন বড়লোকদের মহাকাশে নিয়ে যাওয়ার প্যাকেজ দেয়, তেমন করে ওশানগেইট সাগরতলে নিয়ে যাবে। প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও স্টকটন রাশ ২০১৭ সালে বলেছিলেন যে, গত ৩৫ বছরে সিরিয়াস কোনো অঘটন ঘটেনি সাবমেরিন দুনিয়ায়; সেই হিসেবে, পরিসংখ্যানগতভাবে, সাবমেরিন হলো দুনিয়ার নিরাপদতম যান। তাছাড়া, তার মতে, মঙ্গল বা অন্য গ্রহ নয়, মানবজাতির বাসযোগ্য ভবিষ্যৎ সমুদ্রের নিচেই হওয়া উচিৎ।

     এখানে একটি সংশোধন দিই, আমি সাবমেরিন লিখলেও আসলে এটি হবে সাবমার্সিবল (Submersible), ডুবোযান। সাবমার্সিবল এমন জলযান যেটি কিনা পানির নিচে চলে, কিন্তু আশপাশে সাপোর্ট হিসেবে থাকে কোনো সার্ফেস জলযান অর্থাৎ যা পানির ওপর থাকে, কিংবা সাপোর্ট হিসেবে কোনো তীরবর্তী লোকদল থাকতে পারে, বা কোনো বড় সাবমেরিন। অর্থাৎ সাবমেরিন বলতে যে শক্তিশালী স্বাবলম্বী ডুবোযান আপনার চোখে ভেসে ওঠে, সাবমার্সিবল কিন্তু তা নয়। তবে সংজ্ঞার দিক থেকে, সকল সাবমেরিনই সাবমার্সিবল, তবে সকল সাবমার্সিবল সাবমেরিন নয়।

     কী কী রকম সাবমার্সিবল আছে এই কোম্পানির? আপাতত তিন রকম, অ্যান্টিপোডস, সাইক্লপ্স-১ (৫ জন, ৭২ ঘণ্টা), আর টাইটান (সাইক্লপ্স-২)। টাইটান চার কিলোমিটার নামতে পারে, কার্বন ফাইবার ও টাইটেনিয়াম দিয়ে বানানো কাঠামো। টাইটানের দরজা ভেতর থেকে খোলার কোনো উপায় নেই, বাইরে থেকে শক্ত করে আটকে দেয়া হয়। ভেতরে কোনো নেভিগেশন সিস্টেম নেই, কন্ট্রোল করা হয় একটি গেমিং কন্ট্রোলার দিয়ে, হয়তো অনেকে ব্যবহার করেছেন সেটা- লজিটেকের F710 কন্ট্রোলার! এর কোনো ইমার্জেন্সি লোকেটর বিকনও নেই, অর্থাৎ বিপদে পড়লে এটি কোনো সিগনাল দিতে পারবে না এর অবস্থান নির্ণয় করার জন্য। টাইটান মাত্র ২২ ফুট দীর্ঘ (৬.৭ মিটার), ভেতরে জবুথবু হয়ে বসে থাকা লাগে, দাঁড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। ৯৬ ঘণ্টা পর্যন্ত ৫ জনকে বাঁচানোর মতো অক্সিজেন থাকে এতে। টাইটানে কার্বন ডাইঅক্সাইড পরিশোধন আর বাতাস পুনঃসঞ্চালনের কোনো সুযোগ নেই। স্পেসএক্সের স্টারলিংক স্যাটেলাইট ব্যবহার করা হয় টাইটানের ইন্টারনেটের জন্য, অন্তত সেটাই বলা হয়েছিল তাদের আইডি থেকে টুইট করে। মোদ্দা কথা, টাইটান মূলত এক্সপেরিমেন্টাল যান, এটা জেনেই আসলে থ্রিলের জন্য চড়ে বসেন যাত্রীরা। না জেনে নয়! নিজের ঝুঁকিতেই!

     এবার আসল ঘটনায় আসি। ১৬ জুন ২০২৩ নিউফাউন্ডল্যান্ড থেকে যাত্রা করে জাহাজ এমভি পোলার প্রিন্স। ১৭ জুন টাইটানিক ডুবে যাওয়ার ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায় প্রিন্স। ১৮ জুন অতলান্তিক সময় সকাল ৯টায় সাবমার্সিবল অর্থাৎ টাইটান ডাইভ দেয়। প্রথম এক ঘণ্টা ৪৫ মিনিট সব ঠিকই ছিল (১৫ মিনিট পর পর যোগাযোগ), এর পরই সব অন্ধকার- অর্থাৎ আর কোনো যোগাযোগ নেই ওখান থেকে। ১১:৪৭ মিনিটের দিকে শেষ কথা হয়েছিল। সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটের দিকে আবার উঠে আসার কথা ছিল টাইটানের। কিন্তু কীসের কী! কোনো খোঁজই নেই। ২২ জুন টাইটানের ৯৬ ঘণ্টার অক্সিজেন শেষ হয়ে যাওয়ার কথা।

     হতে পারে টাইটানের কমিউনিকেশন সিস্টেম নষ্ট হয়ে গেলেও তার চলাচল ক্ষমতা ঠিক আছে। কিংবা হতে পারে এর ব্যালাস্ট সিস্টেম নষ্ট হয়ে গেছে, ফলে টাইটান আর ভেসে থাকতে পারেনি যেমনটা থাকার কথা। অথবা, হয়তো টাইটান দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে- বা বিস্ফোরিত হয়ে সাথে সাথেই যাত্রীদের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

     কে কে ছিলেন টাইটানে?

     ১) দাউদ-হারকিউলিস করপোরেশনের ব্রিটিশ-পাকিস্তানি ব্যবসায়ী শাহজাদা দাউদ। বয়স তার ৪৮।
     ২) সুলেমান দাউদ- যিনি কিনা শাহজাদা দাউদের ১৯ বছর বয়সী পুত্র।         
     ৩) ব্রিটিশ ধনকুবের, অ্যাডভেঞ্চারার, বিমানচালক, এবং মহাকাশ-পরিব্রাজক হ্যামিশ হার্ডিং। হার্ডিং ২০১৯ সালে সবচেয়ে কম সময়ে মেরু বরাবর উড়ে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে আসার রেকর্ড স্থাপন করেছিলেন। তার বয়স ৫৮ বছর।
     ৪) পল-অঁরি নার্জোলে- তিনি একজন ফরাসি নেভি কমান্ডার, ডাইভার, তিনি নিজেও সাবমার্সিবল চালাতে পারেন। তার চালনায় হাজার হাজার আর্টিফ্যাক্ট উদ্ধার করা হয়েছে নানা ধ্বংসস্তূপ থেকে। বয়স ৭৭। তিনি অন্তত ৩৫ বার টাইটানিকের ধ্বংসস্তূপে গিয়েছেন! নিজেই উদ্ধার করেছেন এখান থেকে প্রায় ৫,০০০ আর্টিফ্যাক্ট। তাকে বলা হতো মিস্টার টাইটানিক। প্রথম যেবার টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষে যাওয়া হয়, সেবারও কিন্তু তিনি গিয়েছিলেন সেখানে! প্রথম ছবিগুলো তার ও তার দলেরই তোলা। অবশ্য তিনি জানতেন সেখানে যাওয়াটা কোট বিপজ্জনক, “আপনি কিছু বুঝে ওঠার আগেই মারা যেতে পারেন।”
     ৫) সেই যে সাবমার্সিবলকে সবচেয়ে নিরাপদ যান বলে আখ্যায়িত করেছিলেন- সেই স্টকটন রাশ। ওশানগেইটের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও। তিনিই টাইটানের চালক। বয়স ৬১। রাশের স্ত্রী ওয়েন্ডি রাশ টাইটানিক জাহাজে নিহত দুজন ফার্স্ট ক্লাস যাত্রীর বংশধর। যাত্রী ইসিডর ও আইডা স্ট্রসের গ্রেট-গ্রেট-গ্রেট-গ্র‍্যান্ড-ডটার এই ওয়েন্ডি। তিনি নিজে তিনবার টাইটানিকের ধ্বংসস্তূপে গিয়েছিলেন।

     টাইটানের সার্টিফিকেশন যথেষ্ট ছিল না অত নিচে অভিযান পরিচালনা করার। এর আগেও অন্য অভিযানে দেখা গিয়েছে, ৫ ঘণ্টার জন্য টাইটান যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। সিইও রাশ এই যান পরীক্ষণে রাজি ছিলেন না, একারণে ৩৮ জন মেরিন বিশেষজ্ঞ সতর্ক করেছিলেন রাশকে; ২০১৮ সালে কোম্পানির এক প্রাক্তন কর্মী নিরাপত্তা ইস্যুতে মামলাও ঠুকে দিয়েছিলেন। এছাড়া যে অ্যাক্রিলিকের ভিউপোর্ট দিয়ে আপনি টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখবেন, সেটা ১৩০০ মিটারের মাঝে ঠিকঠাক কাজ করার মতো, এর নিচে গেলে রিস্কি।   

     মার্কিন কোস্ট গার্ড, নেভি, ও কানাডিয়ান কোস্ট গার্ড মিলে তাদের খোঁজ করেছে, কিন্তু তারা খুব একটা আশাবাদী ছিলেন না, বরং একে আখ্যায়িত করা হয়েছে খড়ের গাদায় সুঁই খোঁজা হিসেবে; প্রায় ২০,০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে খোঁজা হচ্ছিলো। এ পোস্ট প্রাথমিকভাবে লেখার সময় অবশ্য রেস্কিউ মিশনই চলছিল, কিন্তু এখন সেটা হবে রিকভারি মিশন (আপডেট করে বললাম)। আটলান্টিকের ওখানে এক স্থানে ‘শব্দ’ (ব্যাংগিং সাউন্ড) পাওয়া গিয়েছিল, যা শোনার পর সেখানে খোঁজ বাড়ানো হয়, তবে কোনো আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যায়নি (কোস্ট গার্ড পরে নিশ্চিত করে যে, এ শব্দের সাথে টাইটানের সম্পর্ক ছিল না)। নিরাশার কারণটা কী জানেন? একে তো খুঁজেই পাওয়া যায়নি যে কোথায় আছে সেই টাইটান, তার ওপর খুঁজে যদি এক সময় খুঁজে পাওয়াও যায়- তারপর সেটাকে উঠিয়ে এনে হ্যাচ খোলার সময় হবে কি? নাকি নিচে গিয়ে অক্সিজেন দেয়া হবে? সেটাই বা করবে কীভাবে এবং কারা? (আপডেট: খুঁজেই পাওয়া যায়নি, বাকি কাজ তো দূরের কথা)

     দুনিয়ার ৭০% হলো এই সাগর-মহাসাগর। অথচ এই সাগরের ৫%-ও এখনও এক্সপ্লোর করা হয়নি মানবজাতির। নিচের নিকষ কালো আঁধারে প্রতি ১০ মিটার নিচে নামা মানে মাথার ওপর প্রতি বর্গইঞ্চিতে ৬.৪৭ কেজি বস্তুর সমান ভার যোগ হওয়া। যেমন, দুই কিলোমিটার নিচে আপনি প্রতি বর্গইঞ্চিতে ১২৭০ কেজি বস্তুর ভার অনুভব করবেন, কিংবা অনুভব করার আগেই মারা যাবেন- যদি না ডুবোযানের পুরু আস্তরণ বাধা না হয়ে দাঁড়ায়। তাছাড়া নিচে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় মারা যাওয়াটাও স্বাভাবিক। টাইটানের যদি সবকিছু ঠিকঠাক কাজ করতো তাহলে ওপরে উঠে আসার চেষ্টা করতো নিশ্চয়ই। তবে উঠে এলেও, কেউ যদি খুলে না দেয়, তাহলেও অক্সিজেনের অভাবে মারা যাবেন যাত্রীরা। টাইটানের প্রাসঙ্গিক কিছু ছবি কমেন্টে শেয়ার করছি। ২২ জুন বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায় কাগজে কলমে টাইটানের অক্সিজেন শেষ হয়ে যায়। তবে তার আগেই তাদের মৃত্যু হয় বলে মনে হচ্ছে। কীভাবে বলছি? প্রেস কনফারেন্স থেকে। ২২ জুন বৃহস্পতিবার দিনশেষে মার্কিন কোস্ট গার্ড অফিশিয়ালি তাদের প্রেস ব্রিফিংয়ে জানায় যে, টাইটানিকের ১৬০০ ফুট দূরেই পাওয়া গিয়েছে টাইটানের ধ্বংসাবশেষের অংশ (Tail cone)। Catastrophic Implosion-এ ধ্বংস হয়ে যায় টাইটান। তারা টাইটানের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ খুঁজে পান। ROV (Remotely Operating Vehicle)-এর সাহায্যে প্রথম খুঁজে পাওয়া যায় Nose Cone, এরপর এর কাছে একটি বড় এলাকা জুড়ে ধ্বংসাবশেষ, সেখানে পাওয়া যায় Pressure Hull এর একটি end bell; এসবের কাছে আরেকটি অপেক্ষাকৃত ছোট ধ্বংসাবশেষ এলাকা পাওয়া যায় যেখানে Hull এর বিপরীত পাশের অংশ ছিল। Implosion মানে ভেতরের দিকে বিস্ফোরণ, বাইরের দিকে নয়; দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া। এখনও ভেতরের যাত্রীদের দেহ নিয়ে কিছু জানা যায়নি, তবে তারা নিশ্চিতভাবেই মৃত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগে টাইটানে করে টাইটানিক পর্যন্ত পৌঁছাতে। দুই ঘণ্টা শেষ হবার ১০-১৫ মিনিট আগেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আমার ধারণা, তখনই কিছু একটা হয়েছিল, টাইটানিকের একদম কাছে গিয়েই তাদের করুণ মৃত্যু হয়।

     সিইও স্টকটন রাশ যে কথাটি বলেছিলেন সেটা কিন্তু পরিসংখ্যানগত দিক দিয়ে সত্য বলা যায়, দম্ভ নয় ঠিক। এবং, কেবল ২০২২ সালেই এই টাইটান ২৮ জনকে নিয়ে টাইটানিক দর্শন করে এসেছে, অর্থাৎ এবারের ঘটনা পরিসংখ্যানগত দুর্ভাগ্য। তবে হ্যাঁ, ২০১৭ সালের এপ্রিলে এক সাক্ষাৎকারে রাশ বলেছিলেন, সমস্ত টেস্টিং করা হয়ে গেলে, টাইটানকে আমার মোটামুটি invulnerable-ই মনে হয়। নির্মম পরিহাস যে, তার উদ্যোগে তার জাহাজেই তার মৃত্যু হতে চলেছে (বা হয়েছে) বলে মনে হচ্ছে। কোথায় যেন লেখা দেখলাম, নামেই হয়তো সমস্যা। টাইটান-টাইটানিক। তবে এখানে ব্যাপারটা ঠিক তা নয়, টাইটানিক প্রথম যাত্রাতেই ডুবে যায়, টাইটানের ক্ষেত্রে তা হয়নি। আবার টাইটানিক ডুবে গেলেও, এর জমজ জাহাজ (সমান আকার, টনেজ একটু কম) ‘অলিম্পিক’ ২৪ বছর সার্ভিস দিয়ে ১৯৩৫ সালে অবসরে যায়। আরেক সিস্টার শিপ ছিল ‘ব্রিটানিক’, সেটা অবশ্য আর প্যাসেঞ্জার শিপ হিসেবে যাত্রাই করতে পারেনি, যুদ্ধের সময় একে হসপিটাল শিপ হিসেবে ব্যবহার করা হয়, কিন্তু ১৯১৬ সালে জার্মান মাইনের আঘাতে এর সলিল সমাধি ঘটে।

     যদিও এক শতাব্দী পরে এসে জনসাধারণের ধারণা হয়েছে, টাইটানিকের নির্মাতাই বলেছিলেন যে টাইটানিক জাহাজটি ‘unsinkable’, ব্যাপারটা আসলে সত্য নয়। নির্মাতা কোম্পানি ‘হারল্যান্ড অ্যান্ড ওলফ’ কোনোদিনই এই দাবী করেনি কাগজে কলমে। তবে তিনটি খবরে (বা বিজ্ঞাপনে) এমন দাবী দেখা গিয়েছিল। ব্রিটিশ শিপিং লাইন ‘হোয়াইট স্টার লাইন’-এর বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, “as far as it is possible to do so, these two wonderful vessels are designed to be unsinkable.”; বাকি দুটোর মধ্যে একটি প্রকাশিতই হয়নি। এ দাবীটি অলিম্পিক ও টাইটানিক উভয়ের ক্ষেত্রেই ছিল। আরও কিছু জাহাজের ব্যাপারে ছিল, সে কথায় আর গেলাম না। বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন, টাইটানিক যে unsinkable সেটার চাইতে এর বিলাসবহুলতাই ছিল এর প্রেস্টিজের কারণ, বিজ্ঞাপনগুলোতে এই বিলাসবহুলতাকেই প্রাধান্য দেয়া হতো, এজন্যই এত লোক চড়তে চেয়েছিল। তাহলে কবে থেকে এই unsinkable মিথ শুরু হলো? টাইটানিক ডোবার পর পত্র পত্রিকা সেই কথাটা ভাইরাল করে দেয়, এর আগ পর্যন্ত এটা মোটেও লোকের মুখে মুখে ছিল না। টাইটানিকের ডোবার খবর শোনার পর ফিলিপ ফ্রাঙ্কলিন (হোয়াইট স্টার লাইনের প্যারেন্ট কোম্পানি ইন্টারন্যাশনাল মার্কেন্টাইল মেরিন কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট) বলেন, “আমি ভেবেছিলাম টাইটানিক unsinkable, আমার এমন ধারণা হয়েছিল বিশেষজ্ঞদের কথাবার্তা শুনে। আমি বুঝতে পারছি না এটা কী হলো।” প্রেস সাথে সাথে এই মন্তব্য লুফে নেয় এবং ফলাও করে প্রচার শুরু করে দেয়, টাইটানিক আনসিংকেবল। এর সাথে জুড়ে যায় আরেকটি গুজব, ‘স্বয়ং ঈশ্বর এ জাহাজকে ডুবাতে পারবেন না!’ কেউ বলল এটা ক্যাপ্টেন নিজে বলেছেন, কেউ বলল কোনো এক ক্রু সদস্য বলেছে, কিন্তু সেই ঘটনার কেউ সত্যায়ন করতে পারেনি। টাইটানিক নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব রয়েছে, সেগুলো আর এ পোস্টে আলোচনা করতে গেলাম না।

     যুগে যুগে রোমাঞ্চের সন্ধানে সবসময়ই শত সহস্র লোক বেরিয়ে পড়েন। কেউ বলতে পারেন, কী দরকার এভারেস্টে ওঠার, কী দরকার সমুদ্রতলে যাওয়ার, কী দরকার চাঁদ-মঙ্গল জয় করার। কিন্তু সত্যি কথা হলো, রোমাঞ্চ কিংবা কৌতূহল যদি না থাকতো, মানবজাতি কোনোদিনই সামনে এগুতো না। আপনার আমার কাছে এগুলো হয়তো স্রেফ টাকাওয়ালাদের থ্রিল, হয়তো ভাবছেন কতগুলো টাকার অপচয়! কিন্তু এটাও সত্য যে, দুনিয়া এতদূর আসতোই না যদি গুটিকয়েকের কৌতূহলী মন না থাকতো। একটা সময় হয়তো সমুদ্রতলে এক ট্রিপ মেরে আসা বন্ধুদের সাথে একবার সেন্ট মার্টিন ঘুরে আসার মতোই সহজ হয়ে যাবে সবার কাছে। অথচ এক দেড়শো বছর আগেও কেউ বিশ্বাস করতো না যে হাজার হাজার মাইল দূর থেকে কেউ মাত্র কয়েক ঘণ্টায় হজ্ব করতে চলে যেতে পারে, কিংবা পার হয়ে যেতে পারে অতলান্তিকের বিশালতা!

     পুনশ্চঃ অনেকে বলছেন, টাইটানের খবর কভার করলেও কেন অবৈধ অভিবাসী মানবপাচারে ব্যবহৃত জাহাজ উলটে যাওয়ার ঘটনা কেন কভার করা হচ্ছে না। মূলত, একই সপ্তাহে আন্তর্জাতিক জলে আরেকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে, যেখানে মৃত্যুসংখ্যা আরও বেশি। ১৪ জুন ২০২৩ সকালবেলা একটি মাছ ধরার ট্রলার গ্রিসের দক্ষিণ উপকূলীয় পাইলোস অঞ্চলের কাছাকাছি এক স্থানে উলটে যায়। সেই ট্রলারে গাদাগাদি করে (এবং সম্ভবত নিচেও) ৭০০+ লোক ছিলেন, যারা মূলত পাকিস্তান, মিসর ও সিরিয়া থেকে উন্নত জীবনের খোঁজে গ্রিসে যাচ্ছিলেন। তাদেরও সলিল সমাধি হয়েছে, তবে উদ্ধার করা হয়েছে শখানেক লোককে, আর লাশও প্রায় সমপরিমাণ পাওয়া গিয়েছে। বাকিরা নিখোঁজ। টাইটান আর গ্রিক জাহাজডুবির ঘটনার মধ্যে টাইটানের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি রিচ পেয়েছে। অবশ্য মূলধারার নিউজে দুটোই পেয়েছি ও পড়েছি আমি, কিন্তু ফেসবুকে সেন্সেশনের দিক থেকে টাইটান যে এগিয়ে, সেটা বলাই বাহুল্য। কেন সেটা, তার উত্তর পাঠকদের হাতেই ছেড়ে দিলাম।

     পুনশ্চ-২ঃ অতলান্তিক মানে আটলান্টিক। এর অর্থ অ্যাটলাসের সাগর। গ্রিক পুরাণে অ্যাটলাস একজন টাইটান, তার কাঁধে অনন্তকালের জন্য আকাশের বোঝা, অর্থাৎ অ্যাটলাস সমতল পৃথিবীর সুদূর পশ্চিম প্রান্তে আকাশের ভার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেন আকাশ ভেঙে না পড়ে মাটির ওপর। মেরুদণ্ডের সাথে খুলির সংযোগ স্থাপন করা সবচেয়ে ওপরের ভার্টেব্রা হাড়ের নামও কিন্তু অ্যাটলাস রাখা হয়েছে একারণে, এ হাড় বহন করে খুলিকে।

     পুনশ্চ-৩ঃ টাইটানিক, টাইটেনিয়াম বা টাইটান নাম এসেছে গ্রিক পুরাণ থেকে। পুরাণ অনুযায়ী, জিউস পসাইডন হেইডিসদের মতো অলিম্পিয়ান দেবতাদের ক্ষমতা দখলের আগে দেবতার দায়িত্বে ছিল এই টাইটানরাই। যেমন, হাইপেরিয়ন, ওশেনাস, ক্রোনাস, রেয়া- এরা হলো টাইটান। ক্রোনাস আর রেয়ার সন্তান জিউস কিন্তু টাইটান নয়, বরং অলিম্পিয়ান দেবরাজ। আবার সেই জমজ জাহাজ অলিম্পিক নামটা এসেছে গ্রিসের অলিম্পিয়া নামের জায়গা থেকে, অলিম্পিয়া নামটা আবার এসেছে মাউন্ট অলিম্পাস থেকে- গ্রিক দেবতাদের সুউচ্চ বাসস্থান। আর অন্য ডুবোযানের নাম যে ‘সাইক্লপ্স’, সেই সাইক্লপ্স ছিল গ্রিক পুরাণের একচোখা দানব।

লেখা: আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদ

ShareTweetShare

Related Posts

কে ছিলেন শহীদ এ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন, যার নামে ছিল পাবনা জেলা স্টেডিয়াম!
জীবনযাপন

কে ছিলেন শহীদ এ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন, যার নামে ছিল পাবনা জেলা স্টেডিয়াম!

মে ২৩, ২০২৫
পদ্মা নদীর বালু মহালের দখল নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ; গুলিবিদ্ধ ৭
অপরাধ

পদ্মা নদীর বালু মহালের দখল নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ; গুলিবিদ্ধ ৭

মে ২৩, ২০২৫
সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ জাতীয় পর্যায়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় চারটি ইভেন্টে চ্যাম্পিয়ন
খেলা

সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ জাতীয় পর্যায়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় চারটি ইভেন্টে চ্যাম্পিয়ন

মে ২১, ২০২৫
জাতীয় যুবশক্তির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পেলেন পাবনার মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ
পাবনা

জাতীয় যুবশক্তির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পেলেন পাবনার মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ

মে ২১, ২০২৫
আটঘরিয়ায় বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষের ঘটনায় পৃথক দুই মামলা; গ্রেপ্তার নেই
আটঘরিয়া

আটঘরিয়ায় বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষের ঘটনায় পৃথক দুই মামলা; গ্রেপ্তার নেই

মে ২১, ২০২৫
একটি ইঞ্জিন রিকশার স্বপ্ন ৭৫ বছর বয়সী শাহজাহানের
জীবনযাপন

একটি ইঞ্জিন রিকশার স্বপ্ন ৭৫ বছর বয়সী শাহজাহানের

মে ৭, ২০২৫
Next Post
চাটমোহরে স্কুলছাত্রীদের উত্যক্ত করার  প্রতিবাদে মানববন্ধন; অভিযুক্ত কে গ্রেপ্তারের দাবি 

চাটমোহরে স্কুলছাত্রীদের উত্যক্ত করার  প্রতিবাদে মানববন্ধন; অভিযুক্ত কে গ্রেপ্তারের দাবি 

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • সর্বশেষ
  • পাবনা
  • অপরাধ
  • রাজনীতি
  • বাংলাদেশ
  • পরিবেশ
  • প্রযুক্তি
  • ক্যাম্পাস
  • সাহিত্য-সংস্কৃতি
  • বিশ্ব
  • বাণিজ্য
  • খেলা
  • বিনোদন
  • জীবনযাপন
  • মতামত
  • ছবির বার্তা
  • ভিডিও বার্তা
স্বত্ব © ২০২৩ চলতি বার্তা | সম্পাদক ও প্রকাশক : এহসান আলী বিশ্বাস
ইমেইল: choltibarta.news@gmail.com
যোগাযোগ:
মাসুদ রানা, বার্তা সম্পাদক ও বিজ্ঞাপন, +8801740-934683
জাহিদুল ইসলাম, নিউজ ও মাল্টিমিডিয়া, +8801772-748546
অস্থায়ী কার্যালয়: ইউসুফ বিশ্বাস মার্কেট, ৩৫৬ সোনাপট্টি, পাবনা।
Design & Developed by Interweb

No Result
View All Result
  • সর্বশেষ
  • পাবনা
    • পাবনা সদর
    • ঈশ্বরদী
    • আটঘরিয়া
    • চাটমোহর
    • ভাঙ্গুড়া
    • ফরিদপুর
    • বেড়া
    • সাঁথিয়া
    • সুজানগর
  • অপরাধ
  • রাজনীতি
  • বাংলাদেশ
  • পরিবেশ
  • প্রযুক্তি
  • ক্যাম্পাস
  • সাহিত্য-সংস্কৃতি
  • বিশ্ব
  • বাণিজ্য
  • খেলা
  • বিনোদন
  • জীবনযাপন
  • মতামত
  • আরো
    • ছবির বার্তা
    • ভিডিও বার্তা

স্বত্ব © ২০২৩ চলতি বার্তা | সম্পাদক ও প্রকাশক: এহসান আলী বিশ্বাস
যোগাযোগ:
অস্থায়ী কার্যালয়: ইউসুফ বিশ্বাস মার্কেট, ৩৫৬ সোনাপট্টি, পাবনা। |
Design & Developed by Interweb

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In