বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠের খরতাপে যে সকল ফুল মনে প্রশান্তি এনে দেয় তার মধ্যে নিশ্বন্দেহে কৃষ্ণচূড়া অন্যতম। গ্রীষ্মের ফুল হিসেবে রাধাচূড়া, সোনালু বা জারুল ফুলের সৌন্দর্য্যও কম নয়। তবে এবছর সেসব ফুলের সাথে তালিকায় যোগ হয়েছে নতুন একটি ফুল- নীল কৃষ্ণচূড়া।
লম্বা গাছের চিরল সবুজ পাতার আড়ালে শোভা ছড়াচ্ছে ফুলটি। পাবনার বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্রের আঙ্গিনায় রয়েছে গাছটি। সেখানে অবশ্য গাছটির নাম লিখা রয়েছে আকাশী কৃষ্ণচূড়া। ফুলটির আসল নাম মুলত জ্যাকারান্ডা। ইংরেজি নাম Blue Jacaranda । বৈজ্ঞানিক নাম: Jacaranda mimosifolia । জন্মস্থান ব্রাজিল। আমাদের দেশে ফুলটিকে অনেকে নীলকন্ঠ নামেও ডাকেন। ভারতবর্ষে এটি পরিচিত নীল গুলমোহর নামে। গুলমোহর মুলত কৃষ্ণচূড়ার অপর নাম। হয়তো তাই ফুলটির বাংলা নাম হয়েছে নীল কৃষ্ণচূড়া। আবার অনেকের মতে: নীল ফুলের গাছটির আকৃতি, কান্ড ও পাতা কৃষ্ণচূড়া গাছের মত হওয়ায় অনেকে ফুলটিকে নীল বা আকাশী কৃষ্ণচূড়া বলে ডাকেন।
পাবনার এই গাছটি আনা হয়েছিল সুদুর নেপাল থেকে। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু শহরে রাস্তার দুই ধারে সারি সারি রয়েছে এই ফুলগাছ । আবার দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন ও প্রিটোরিয়া শহরে অসংখ্য জ্যাকারান্ডা গাছ রয়েছে। তাই প্রিটোরিয়া, জ্যাকারান্ডার শহর নামেই পরিচিত। গাছটির আদিনিবাস দক্ষিণ আমেরিকা হলেও বর্তমানে এটি আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন, পর্তুগাল ও ইতালি বেশ সহজলভ্য। গাছটি অপেক্ষাকৃত কম শীতের দেশগুলোতে ভালো জন্মায়। তবে জলাবন্ধতা থাকলে সেখানে এই গাছ টিকিয়ে রাখা দুষ্কর। হয়তো তাই বাংলাদেশে অনেক বছর আগেই গাছটির প্রবেশ ঘটলেও তার বিস্তার ঘটেনি।
গাছটির কান্ড কৃষ্ণচূড়ার মতই হালকা ধুরস রঙের। বৈশাখের প্রথমভাগেই গাছটিতে চিকন সবুজ কারুকার্য মন্ডিত পাতা গজায়। এরপর ডালের আগায় কলি দেখা যায়। কিছুদিন পরেই কলি থেকে ফুটতে শুরু করে মাইক আকৃতির ফুলগুলো। ফুলের রং বেগুনী বা আকাশনীল । ব্রাজিলে ভেষজ চিকিৎসায় এই গাছের ব্যবহার রয়েছে। শোনা যায় এই গাছের কাঠ বেশ দামি ও সুগন্ধিযুক্ত। তবে দামের চিন্তা না করে সৌন্দের্য্যের জন্য হলেও আমাদের দেশে গাছটির বিস্তার ঘটলে মন্দ হয় না।