বৈশাখের তপ্ত দিন। তাপমাত্রার পারদ ৪১ ডিগ্রি ছুঁয়েছিল। নেমে এল সন্ধ্যা। গরমের তীব্রতা তখনো কমেনি। এর মধ্যেই দর্শকে পূর্ণ মিলনায়তন। মঞ্চে আলোর ঝরনাধারা বইছে। ঘোষণা এল অনুষ্ঠান শুরুর। যুগল কণ্ঠে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘তোমাকে যখন দেখি…’ ও রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর ‘উল্টো ঘুড়ি’ কবিতার দ্বৈত আবৃত্তি, সঙ্গে নৃত্য। এরপর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের পূজা পর্যায়ের গান ‘আমি বহু বাসনায়’।
এমন এক চমৎকার আবহে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় পাবনার বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ‘হরেক গানের ঝুলি’। বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠানটি পরিবেশন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন কৃত্তিম। সানি চাকির সঙ্গীত আয়োজনে গান, নৃত্য ও আবৃত্তিতে আনা হয় বৈচিত্র্য। গিটার ও তবলার সঙ্গে নানা বাদ্যযন্ত্রে তোলা হয় সুরের মূর্ছনা। বৈশাখের তপ্ত দিন শেষে সন্ধ্যার এ আয়োজন প্রশান্তি এনে দেয় হৃদয়ে। মুগ্ধতা প্রকাশ করেন দর্শকেরা।
রবীন্দ্রনাথের গান শেষে অর্ধাঙ্গিনী চলচ্চিত্রের গরমে যখন মানুষের খুব খারাপ অবস্থা, তখন এই আয়োজন সত্যিই প্রশান্তির পরশ দিয়েছে। হান্না শেলি, অভিনয়শিল্পী, পাবনা ‘আলাদা’ ও হাবিব ওয়াহিদের ‘দিন গেল’ গান দুটি গেয়ে শোনান শিল্পী ফাহমিদা চাঁদনী ও তারেক মাহমুদ। শিল্পী আরমান বিশ্বাসের কণ্ঠে আরও একটি গান শোনেন শ্রোতারা। এরপর কথক নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্প সম্প্রীতি চাকী লহরী। মুহুর্মুহু করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে পুরো মিলনায়তন।
এরপর অমিত অভ্র, বিনীতা ভদ্র, অনিক বিশ্বাস, আরমান বিশ্বাস, অভিজিৎ সরকার ও লেয়া সরকার পরপর আরও কয়েকটি গান গেয়ে শোনান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন নোশিন নেহা ও মিনহাজ ইসলাম। নৃত্য পরিবেশন করেন ঝরা ও বাপ্পি।
দিনভর প্রচণ্ড গরম শেষে সুর-ছন্দে মেতে এই অনুষ্ঠান উপভোগ করেন জেলা শহরের সংস্কৃতিপ্রেমীরা। একরাশ প্রশান্তি আর মুগ্ধতা নিয়ে বাড়ি ফেরেন তাঁরা। দর্শক সারিতে বসে অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন পাবনা পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ অখিল চন্দ্র কুন্ডু। তিনি বলেন, দিনভর তাপপ্রবাহ সহ্য করার পর কৃত্তিমের আকৃত্রিম পরিবেশনা হৃদয় ছুঁয়েছে।
এই অনুষ্ঠানের বিষয়ে অভিনয়শিল্পী হান্নান শেলী বলেন, গরমে যখন মানুষের খুব খারাপ অবস্থা, তখন এই আয়োজন সত্যিই প্রশান্তির পরশ দিয়েছে।
অনুষ্ঠানের সমন্বয়কারী প্রলয় চাকি বলেন, পাবনা শহরে এমন ব্যতিক্রম আয়োজন আশা করি সকলেই মনে রাখবেন। সাজানো গোছানো অনুষ্ঠানটিতে সকলেই ভালো পরিবেশনা করেছে যা দর্শকদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে।
শেষ গানের মাধ্যমে যখন ছুটির ঘন্টা বাজলো তখনও যেন তৃষ্ণা মেটেনি, সেই কথা জানালেন দর্শকরা। এমন আয়োজন আবার কবে হবে, সেই অপেক্ষায় রইলেন পাবনা শহরের শ্রোতারা।