পাবনা পৌর এলাকার কালাচাঁদপাড়ায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রভাব খাটিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এতে তার এক প্রতিবেশির ভবন হুমকির মুখে পড়েছে। বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোন সুরাহা মিলছে না।
শনিবার (১০ জুন) দুপুরে কালাচাঁদপাড়া এলাকায় নিজ বাড়িতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী প্রতিবেশি পরিবারের সদস্যরা। সংবাদ সম্মলেন লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভুক্তভোগী আব্দুল বারীর মেয়ে বিনতে সাম বারী।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া সম্পত্তিতে দীর্ঘদিন ধরে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন। প্রতিবেশি জিসিআই পাবলিক স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক তাদের বাড়ির সীমানা ঘেঁষে মাত্র সোয়া কাঠা জমির উপর ছয়তলা ভবন নির্মাণকাজ করছেন। বহুতল ভবন নির্মাণে পৌরসভার নিয়ম অনুযায়ী চারিদিকে ৩ ফুট করে চারপাশে জমি ফাঁকা রেখে ভবন নির্মাণ করার বিধান থাকলেও, ভবন মালিক আব্দুর রাজ্জাক তা মানছেন না। পৌরসভার নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে, বিল্ডিং কোড না মেনে অবৈধ ও নিয়ম বহির্ভূতভাবে ভবন নির্মাণ করে চলেছেন তিনি।
তিনি বলেন, ওই ভবন নির্মাণের কারণে প্রতিবেশি আব্দুল বারীর দোতালা ভবনের উপরতলা ও নীচতলায় ফাটল দেখা দিয়েছে। ঝুঁকিপূর্ন হয়ে পড়েছে বসবাস। ওই ভবনের পানি ও পয়ো নিষ্কাশনের পাইপ আমাদের জমির উপর দিয়ে এবং বৃষ্টির পানি, ভবনের ছাদের পানি ও কার্ণিশের সমস্ত পানি আমার জমির উপর পড়ে ভবনের ক্ষতি সাধন করছে। ভবন মালিক আব্দুর রাজ্জাককে বারবার বলা হলেও তিনি কারো কথা শুনছেন না।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, এ বিষয়ে পাবনা পৌরসভা মেয়রের কাছে লিখিত অভিযোগ করে সমস্যার সমাধান হয়নি বরং অভিযোগ দেওয়ার কারণে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ভবন নির্মাণের মালিক আব্দুর রাজ্জাক আমার বয়োবৃদ্ধ পিতা-মাতাকে প্রায়শই হুমকি দিচ্ছে। আমার পিতামাতার ছেলে নাই, আমরা দুই বোন বাহিরে থাকি। আমার বৃদ্ধা পিতা-মাতা একা বসবাস করেন বাড়িতে। তাদের হুমকিতে আমার বাবা-মা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাদের লোকজন আমার স্বামীকেও মোবাইলে ফোনে নানা রকম হুমকি-ধামকি দিচ্ছে।
বিনতে সাম বারী বলেন, আমাদের ক্ষতিগ্রস্থ ভবনের ক্ষতিপূরণ এবং নিয়ম বহির্ভূতভাবে ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ ও ভবন মালিক আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করছি। ওই অবৈধ ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ করার জন্য লিখিত এবং মৌখিকভাবে বারংবার পাবনা পৌরসভা, পাবনা জেলা প্রশাসক, পাবনা নির্বাহী প্রকৌশলী, গণপূর্ত বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও আমরা নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। কেউই উক্ত সমস্যা সমাধানে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
এ বিষয়ে আব্দুল বারী বলেন, যখন ভবন নির্মাণ করেন তখনই আমরা বিষয়টি বলি যে আপনারা নিয়ম মেনে ভবন নির্মান করুন। আমাদের কোন কথা তারা শোনেননি। এরপর আমরা পৌরসভায় অভিযোগ দেই। আমাদের একটাই দাবি জায়গা মেপে তাদের জায়গাতে ভবন নির্মাণ করুক আমাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু অনিয়ম করে আমাদের ক্ষতি করা যাবে না।
আব্দুল বারীর স্ত্রী আফিয়া বারি বলেন, কিছু বললেই অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। আমরা সম্মানের দিকে তাকিয়ে কোনও উত্তর দেইনা। আমার স্বামী তিনবার স্ট্রোক করেছেন। মাঝেমধ্যেই তারা হুমকি-ধামকি দেন। আমাদের এক মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ও একজন ঢাকায় থাকে। কোনও ধরনের বিচার না পাওয়ায় আমরা চরম নিরাপত্তাহিনতায় ভুগছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে যোগাযোগ করে তিনি অসুস্থ্য থাকায় মন্তব্য পাওয়া যাযনি। তবে তার মেয়ে রাজিয়া সুলতানা রিনি বলেন, আপনারা সাংবাদিক, আপনারা মেপে দেখুন কার জায়গা কতটুকু। ৬য় তলা নয়, আমার ৫ তলার প্ল্যান আছে। অনুমতি আছে কিনা সেটা কাগজপত্রে কথা হবে। আপনারা (সাংবাদিক) আসার আগে আমাদের জানাতে হবে। আমরা কাগজপত্র দেখাবো।
এ বিষয়ে পাবনা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল ইসলাম শাহীন, দেড় কাঠা জমির উপরে ৫ তলা ভবন নির্মাণের কোন অনুমোদন দেয়নি পৌরসভা। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।