পাবনায় র্যাব ও ডিবির পোষাকে ডাকাতি করে মালামাল লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (১৪ফেব্রুয়ারি) ভোর রাত সাড়ে ৩টার দিকে পৌর এলাকার পাথরতলা মহল্লায় কমরেড জাকির হোসেনের ভাড়া বাসায় এই ঘটনা ঘটে।
বাসার বাসিন্দা কমরেড জাকির হোসেন জানান, দীর্ঘদিন ধরে সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস করেন তিনি। গত রাত সাড়ে তিনটার দিকে বাড়ির সকল তালা ভেঙ্গে প্রশাসনের ছদ্মবেশে ভেতরে প্রবেশ করে ৭ জন মুখোশধারী। আমার হাতে হ্যান্ডকাপ দিয়ে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে জিম্মি করে ঘরে থাকা টাকা পয়সা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে তারা পালিয়ে যায়। তাদের গায়ে ডিবি পুলিশের পোশাক ও র্যাবের পোশাক পরা ছিল।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একই ফ্লাট বাড়ির নিচতলার ভাড়াটিয়া মোঃ সবুজ হোসেন বলেন, ডিবি পরিচয় দিয়ে আমাদের সাথে কথা বলেছেন। বাড়ির চারতলায় সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর বসবাস করা ঘরেও ব্যাপক লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। উপরে ভাড়া থাকেন জাকির ভাই, তার বাসাতে গিয়ে তাকে ডেকে তুলে আমাকে নিচে নিয়ে এসে আটকে রেখেছে। আমাদের সবার মোবাইল ফোন প্রথমেই নিয়েছে তারা। তৃতীয় ও চতুর্থ তলার ফ্লাটের দরজায় লকতালা দেয়া ছিলো। সেটি ভেঙে ভেতরে ঢুকে আলমারির তালা কেটে সবকিছু নিয়েছে। তাদের কাছে দরজা তালা কাটার সব কিছুই ছিলো। পরিবার নিয়ে ভয়ের মধ্যে রয়েছি। কোন বিপদের মধ্যে পরলাম আমরা।
স্থানীয় বাসিন্দারা আরো জানান, ঘটনার রাতেই ছয় সাতটি বাসার মেইন গেটে নতুন তালা ঝুলিয়ে দেয় এই চক্রটি। তাদের ধারণা এলাকায় জানাজানি হলে যাহাতে বাসা থেকে বের না হতে পারে সেই জন্যই এই কাজ করেছে তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ডাকাতি হওয়া ওই গলিটা পূর্ব থেকেই মাদকাসক্তদের আনাগোনা রয়েছে। সাবেক ডেপুটি স্পিকার টুকুর স্ত্রী সাবেক মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রয়াত লুৎফনেছা এই বাড়িটি ক্রয় করেছিলেন। তৎকালীন সময়ে সাবেক ডেপুটি স্পিকার পাবনা কোর্টের আইন পেশায় নিযুক্ত ছিলেন। এই বাড়িটি দীর্ঘদিন জেলা পাসপোর্ট অফিস হিসাবে ব্যবহার হয়েছে। গলিটি বেশ নিরব। চতুর পাশদিয়ে খুব দ্রুতই বের হওয়া যায়। তবে এখন বেশিরভাগ বাসা ও সড়কে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। প্রশাসনের পরিচয়ে এমন ধরনে কাজ আর যাতে না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে প্রশাসনকে। নয়তো প্রশাসনের অপরাধ দমন অভিযান বাধাগ্রস্থ হবে। সাধারন মানুষের বিশ্বাস হারাবে প্রশাসনের প্রতি।
ঘটনার বিষয়ে পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আব্দুস সালাম বলেন, রাতভর ডিউটি করেছি। এই ধরনের ঘটনা সত্যই অপ্রত্যাশিত। প্রশনের নাম ভাঙ্গিয়ে চুরি বা ডাকাতি করা এটা আমরা হতে দিতে পারিনা। ঘটনার শোনার সাথে প্রশাসনের সকল দপ্তর মাঠে কাজ করছে জেলা পুলিশ স্যারের নির্দেশে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছি আমরা। এই এলাকার সমস্ত সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। আশা করছি খুব দ্রুতই এই ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
এ বিষয়ে পাবনা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিয়াউর রহমান বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমাদের পুলিশ বা র্যাবের কোন টিম এমন কোনো অভিযানে যায়নি, আমরা দ্রুত বিষয়টি উদঘাটন করে প্রকৃত দুষ্কৃতকারীদের ধরার চেষ্টা করবো।