
পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে মাঠে গত শুক্রবার রাতে এক কনসার্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার জের ধরে কলেজে বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এমন একটি ঘোষনা ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জুড়ে। তাতে নানান মন্তব্য প্রকাশ করছেন পাবনা নেটিজেনরা। কিন্তু কারা এই ঘোষণা দিয়েছে তা এখনো পরিস্কার নয়। কলেজ কর্তৃপক্ষের নামে ঘোষণাটি প্রচারিত হলেও এই বিষয়ে কিছুই জানেন না কলেজ প্রশাসন।
উত্তরবঙ্গের অন্যতম সেরা শতবর্ষী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের রজতজয়ন্তী ও পুর্নমিলনী উপলক্ষে চারদিন ব্যাপি নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিভাগটি। শেষ দিনে ছিল উন্মুক্ত কনসার্ট। যেখানে গান পরিবেশন করেন ‘বাংলার গায়েন’ রিয়্যালিটি শোর চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন রাসেল মৃধা, পাবনার সন্তান উক্ত বিভাগের প্রক্তন ক্লোজ আপ ওয়ান তারকা শিল্পী ও সুরকার দেবাশীষ বসু নবীন এবং সংগীত শিল্পী সাবরিনা এহসান পড়শী। মুলত এই অনুষ্ঠান দেখতেই বিপুল পরিমান দর্শকের আগমন ঘটে কলেজ মাঠে।

অনুষ্ঠানের প্রতক্ষ্যদর্শী, কলেজের শিক্ষক মন্ডলী ও আয়োজদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শুক্রবার অনুষ্ঠানে উপলক্ষে বিকেলের পর থেকেই বিপুল পরিমান দর্শকের আগমন ঘটে কলেজ মাঠে। রাত হতে হতে তা জনসমুদ্রে পরিনত হয়। বিকেল থেকে চলা এই অনুষ্ঠানে সকল শিল্পীদের গান বেশ ভালো ভাবেই অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু ঝামেলা বাঁধে পড়শী স্টেজে উঠার আগে। পড়শীর যন্ত্রশিল্পীদের প্রস্তুতির ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময়ের মাঝে দর্শকের চাপ সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। পড়শী পাশে আর এম একাডেমীতে অনেক আগে উপস্থিত থাকলেও দর্শকের চাপে নিরাপত্তা জনিত কারনে স্টেজে আসতে কিছুটা বিলম্ব হয়। এই সময়ে বাঁশের বেড়া ভেঙ্গে মুল স্টেজের কাছে চলে আসেন দর্শকরা। অনুষ্ঠানের পরিবেশ সম্পুর্নভাবে নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। তারপরও দর্শকদের কথা বিবেচনা করা খুব চাপাচাপির মাঝেও দুটি গান পরিবেশ করেন পড়শী। শেষ পর্যন্ত যখন দর্শকরা স্টেজের উপর চলে আসেন তখন নিরাপত্তা জনিত কারনে অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বাধ্য হন আয়োজকরা। কিন্তু তখনই বাধে মুল বিপত্তি। গান শুনতে আসা সহস্র দর্শক বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। এক সময় পড়শীর গান শুনতে না পারার আক্ষেপে চেয়ার ভাঙ্গচুর শুরু করেন। এতে কেউ হতাহত না হলেও বেশ ক্ষতির সম্মুক্ষিন হন আয়োজকরা।

এ বিষয়ে অনুষ্ঠানে আসা সংগীত ভক্তরা জানান, এটা মুলত গানের অনুষ্ঠান। কিন্তু বর্তমান সময়ে মোবাইল ক্যামেরা আর সামাজিক মাধ্যমের কারনে কনসার্টে শ্রোতার চেয়ে দর্শক বেশি হয়। যারা গান শোনার চেয়ে মোবাইলে তা ধারন করতে বেশি সাচ্ছন্দ বোধ করেন। যার ফলে সবাই ভিডিও ও ছবির তোলার জন্য বেরিকেড ভেঙ্গে স্টেজের কাছে চলে আসেন। তাতেই অনুষ্ঠানের পরিবেশ বিনষ্ট হয়ে যায়। এটি কোনো ভাবেই কাম্য নয়। সবার আনন্দের জন্য আয়োজিত এই অনুষ্ঠান অবশেষে বন্ধ হয়ে যায় কিছু মানুষের উশৃঙ্খল আচরনের কারনে। তাই কিছুটা হতাশা নিয়েই বাড়ি ফিরতে হয়েছে রাতে।
পাবনার সন্তান ঢাকায় বর্তমানের সংগীত পরিচালক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সাথে কাজ করছেন তমাল হাসান। এই ঘটনা সম্পর্কে ফেসবুকে তিনি মন্তব্য করেন, “পাবনায় অনেক বড় প্রোগ্রাম হয়েছে। আমি ৮০ শেষ দশক থেকে দেখা শুরু করেছি। দর্শক চাপে প্রোগ্রাম শেষ করে দিতে হয়েছে এমনটা কখনো দেখিনি বা হয়নি। এটা খুব খারাপ একটা কালচার হয়ে দাড়াচ্ছে।”
পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ সমাজবিজ্ঞানের রজতজয়ন্তী ও পুনর্মিলনী উদযাপন কমিটি-২০২৪ এর আহ্বায়ক ও বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. এ. কে. এম শওকত আলী খান জানান, আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করেছি দর্শকের জন্য একটি সুন্দর অনুষ্ঠান উপহার দেবার জন্য। কিন্তু আমাদের ধারনার অতিরিক্ত দর্শকের চাপ একদিকে যেমন আমাদের আনন্দিত করেছে তেমনি খুব চাপেও ফেলেছে। নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা তেমন ব্যাপক পরিসরে চিন্তা ভাবনা করেছিলাম না। যার কারনে দর্শকেরর চাপ এক সময় নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। যারা ভালোবেসে অনুষ্ঠানে এসেছিলেন তাদের প্রতি অসংখ্য ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সেই সাথে আমাদের যেটুকু ভুল ত্রুটি ও অনুষ্ঠান বন্ধ করে দর্শকদের মনে কষ্ট দেবার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। নিরাপত্তা জনিত কারনে আমরা এটা করতে বাধ্য হয়েছি। তবে বড় কোনো দুর্ঘটনা ছাড়া অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়ে জন্য আমরা খুশি ও আগতদের আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
তবে এই অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলতাকে কেন্দ্র করে শনিবার সকাল থেকেই ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস ঘুরছে যে, পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু সরেজমিনে খোজ নিয়ে তার কোনো সত্যতা জানা যায়নি।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পাবনার প্রধান সমন্বয়ক বরকতুল্লাহ্ ফাহাদের সাথে কথা হয়। তিনি জানান, কে বা কারা এটা নিষিদ্ধ করেছে বলতে পারবো না। তবে সামাজিক মাধ্যমে দেখে আমিও পোষ্ট করেছিলাম। কিন্তু পরে খোজ নিয়ে সঠিক তথ্য জানার পর আমি আবার পোষ্ট দিয়ে তা সংশোধন করে দিয়েছি।
পরের পোষ্টে তিনি লিখেন, “এডওয়ার্ড কলেজে ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার নিউজটি সঠিক নয়, কলেজ প্রশাসন এখনো এমন সিদ্ধান্ত নেয়নি”
এই বিষয় আরো কথা হয় পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক মাহবুব হাসান এর সাথে। তিনি জানান, এমন কোনো সিদ্ধান্ত এখনো নেয়া হয়নি। কারন এমন সিদ্ধান্ত নিতে হলে আগে একাডেমিক বা শিক্ষক পরিষদ মিটিং এ বিষয়টি উপস্থাপন করতে হবে। সেখানে বিষয়টি পাশ হলে নোটিশ করা হবে তারপর ঘোষনা দেয়া হবে। কিন্তু এসব কিছুই হয়নি। তাই বিষয়টি সম্পুর্ন গুজব।
তাই এসব গুজব নিয়ে অহেতুক বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে অস্থিতিকর পরিবেশ সৃষ্টি না করার জন্য আহবান জানিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।