পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান বাকিবিল্লাহ।
পাবনা-৩ আসনের এমপি মকবুল হোসেন ও তার ছেলে চেয়ারম্যান প্রার্থী গোলাম হাসনাইন রাসেলের প্রভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয় অভিযোগ করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।
রোববার (১২ মে) দুপুরে পাবনা প্রেসক্লাবের ভিআইপি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন বাকিবিল্লাহ। তিনি জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা নির্বাচনে পাবনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনের ছেলে গোলাম হাসনাইন রাসেল উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে আমার কর্মী-সমর্থকদের উপর বিভিন্ন ধরনের অত্যাচার নির্যাতন ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে আসছেন। যে কারণে নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। আমার কর্মী সমর্থকরা ঘর থেকে বের হতে পারছে না।
বাকিবিল্লাহ বলেন, এমপিপুত্র রাসেল ভাঙ্গুড়া পৌরসভার মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। বাবা এমপি আর ছেলে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হলে আমাদের মত দীর্ঘদিনের বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পরিক্ষিত ব্যক্তির জন্য জায়গা কোথায়? তাদের লক্ষ্য বর্তমান এমপি মকবুল আগামীতে নির্বাচন করতে পারবেন না। তাই নিজের ছেলেকে আগামী নির্বাচনে এমপি প্রার্থী করতে এবার উপজেলা চেয়ারম্যান বানানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এমপি মকবুল হোসেন ও তার পুত্র রাসেল রাজনীতিকে পরিবর্তন করে ফেলেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চাইতে এগিয়ে গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছি, বারবার লাঞ্ছিত হয়েছি, তখন এমপি মকবুল ও তার পুত্র রাসেলের রাজনীতির কি পরিচয় ছিল? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা দিয়েছেন এমপির স্ত্রী-সন্তানরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবে না, তারপরও সেই ঘোষণা উপেক্ষা করে নির্বাচন করছে এমপির ছেলে রাসেল।
নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে বাকিবিল্লাহ বলেন, গত সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচন করায় কিছু আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীর উপরে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়েছে, থানায় এসবের অভিযোগ দিয়েও কোন লাভ হয় নাই। আমার উপজেলা নির্বাচনে আমার কর্মী সমর্থকদের উপর হামলা মামলার ভয় ভীতি প্রদর্শনের কারণে আমার কর্মীরা হতাশাগ্রস্থ। কোথাও কোনো প্রতিকার মিলছে না। এমন পরিস্থিতিতে আমার নির্বাচন করা মোটেও সম্ভব নয়, তাই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালাম।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভাঙ্গুড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লোকমান হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মোস্তফা, হাসিনুর ইসলাম, নুরুল ইসলাম প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে ভাঙ্গুড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লোকমান হোসেন বলেন, ১৯৬৮ সাল থেকে দল করি। মকবুল সাহেবকে আমিই হাত ধরে দলে নিয়ে আসছি। অথচ তিনি এমপি হওয়ার পর থেকে কেন জানি না আমাদের ওপর বিরুপ মন্তব্য, বিরুপ আচরণ করে আসছেন। আমাদের থেকে দূরে সরে গেছেন। আর এখন দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বঞ্ছিত করে তিনি পরিবারলীগ চালু করেছেন।
লোকমান হোসেন বলেন, এমপি সাহেব ও তার ছেলে অর্থের দাপটে আমাদের নেতাকর্মীকে ভয় দেখিয়ে, লোভ লালসা দিয়ে, টাকা দিয়ে উপজেলা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ ও প্রভাবিত করছেন। এমপির ছেলে ঘোষণা করছেন নির্বাচন করতে কত টাকা লাগবে। তাই দেওয়া হবে। এত টাকা কোথায় পাচ্ছেন তারা জানি না। ১৫ বছর এমপির দায়িত্বে আছেন মকবুল সাহেব, অথচ তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির সাথে ১৫টি কথাও বলেননি। ভাঙ্গুড়া উপজেলা আওয়ামীলীগে তার কোনো সহযোগিতা পাইনা।
এসব অভিযোগের বিষয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী ও এমপির ছেলে গোলাম হাসনায়েন রাসেল বলেন, ‘নির্বাচনের শেষ সময়ে এসে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ানো অসাংবিধানিক। তিনি (বাকিবিল্লাহ) ইতোমধ্যে কর্মী শুন্য হয়ে পড়েছেন। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক নয়। অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন নির্বাচন কমিশন তথা সংশ্লিষ্ট দপ্তর। তিনি সরেজমিনে এলাকা ঘুরে যাওয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, মিথ্যাচারের কিছু সীমা থাকে, সেটা তিনি অতিক্রম করে গেছেন। গত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে কাজ করে নিজেই দল থেকে ছুটে গেছেন।’
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য পাবনা-৩ আসনের এমপি মকবুল হোসেনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দ্বিতীয় ধাপে আগামী ২১ মে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আলহাজ মো. বাকী বিল্লাহ (আনারস), উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আলহাজ গোলাম হাসনাইন রাসেল (মোটরসাইকেল)। তিনি পাবনা-৩ এর সাংসদ আলহাজ্ব মো. মকবুল হোসেনের বড় ছেলে। অপর প্রার্থী হলেন, পাবনা জেলা কৃষক লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজবাহুর রহমান রোজ (ঘোড়া)।