অনিন্দ্য সুন্দর নয়নাভিরাম পাখিটিকে প্রথম দেখাতেই যে কেউ প্রেমে পড়তে বাধ্য। বাংলাদেশের দুর্লভ দর্শন জলচর আবাসিক পাখিটির নাম জলময়ূর। ইংরেজি নাম: ফিজান্ট টেইল্ড জাকানা, (Pheasant-tailed jacana) বৈজ্ঞানিক নাম: হাইড্রোফাজিয়ানাস চিরারগাস, (Hydrophasianus Chirurgus)। এরা নেউ, নেউপিপি, পদ্মপিপি বা মেওয়া নামেও পরিচিত। নামের সাথে ময়ূর যুক্ত থাকলেও এরা মোটেও সে প্রজাতির পাখি নয় বা ময়ূরের সাথে এর কোন মিল নেই। শস্যদানা, জলজ ফল ও কীটপতঙ্গ মুলত জলময়ূরের প্রধান খাবার। বিচরণ জলাশয়ে। ডাঙ্গায় দেখা মেলে না বললেই চলে। বিল, হাওর-বাঁওড় বা বড় জলাশয়ে এদের বাস। খাবারের প্রাচুর্যতা ও বাসা তৈরী সুবিধায় পদ্মবিল এদের অধিক প্রিয় আবাস্থল। জলজ পরিবেশে জেলেদের অবাধ বিচরণ, আবাস্থল ধংস ও শিকারিদের অধিক দৌরাত্ম্যে কারণে এ প্রজাতির পাখির সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। তাই একসময় প্রচুর জলময়ূর দেখা গেলেও এখন তা দুর্লভ দর্শন।
জুন থেকে সেপ্টেম্বর প্রজনন মৌসুমে নারী ও পুরুষ জলময়ূর জোড়া বাঁধার সপ্তাহ খানেক পরে জলে ভাসা লতাগুল্মের ওপর বাসা বানায়। সেখানে জলময়ূরী ডিম পেড়ে পালিয়ে গিয়ে আবার অন্য জলময়ূরের সঙ্গে ঘর বাঁধে। আর এদিকে ডিমে তা দেয়া ও বাচ্চাদের দেখভালের পুরো দায়িত্ব পালন করে পুরুষ পাখিরা। জলময়ূরীদের বহুগামিতার জন্য বলা হয় এই পাখিদের যৌন জীবন অন্য পাখিদের চেয়ে ভিন্ন। প্রজনন ঋতুতে একেকটি জলময়ূরী বেশ কয়েকবার ঘর বাঁধে এবং প্রতিবার ২ থেকে ৪টি করে ডিম দেয়।
জলময়ূরের মাথা ও গলা সাদা। ঘাড়টা রেশমি সোনালি হলুদ। পিঠ চকলেট রঙের। ডানার পাশটা ধবধবে সাদা। দেহের তুলনায় লেজ বেশ লম্বা। কাস্তের মতো বাঁকানো। পেটের নিচটা কালচে। এরা শীত মৌসুমে রঙ বদলায়। চকলেট থেকে ফিকে বর্ণ ধারণ করে এবং বুকের ওপরে ‘ভি’ আকৃতির কালো নেকলেসের মতো দেখা যায়। প্রজনন ঋতুতে এদের লেজটা থাকে লম্বা, কিন্তু শীতে লেজটা তুলনামূলকভাবে খাটো দেখায়। দেখতে প্রায় একই হলেও পুরুষ পাখিরা স্ত্রী পাখির তুলনায় আকারে খানিকটা বড়, লম্বালেজ বিশিষ্ট ও অধিক আকর্ষনীয়।
পাবনার চাটমোহর উপজেলার ফৈলজানা ইউনিয়নের ডিকশির বিল থেকে তোলা জলময়ূরের ছবি ও লেখা নিয়ে আমাদের আজকের ছবির বার্তা- “পদ্মবিলের জলময়ূ”