নিজের সন্তানকে হারিয়েই এমনিতেই দিশেহারা আক্তার হোসেনের পরিবার। এরপর আবার সন্তান হত্যার আসামিরা তাদের নিজের পিতাকে হত্যা করে মিথ্যা লুটপাটের অভিযোগ দিয়ে তাদের নামে মামলা দেয়ায় হয়রানির মুখে পড়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন আক্তার হোসেন ও তাদের আত্মীয়-স্বজনরা। পুলিশি তদন্তে প্রকৃত ঘটনা উঠে আসলেও হয়রানি থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না তারা।
এছাড়াও হত্যা মামলা থেকে রক্ষা পেতে ভুক্তভোগীদের বিভিন্ন ভাবে মিথ্যা মামলার হয়রানি ও হুমকি দেয়ারও অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রাণভয় ও নানা আশঙ্কার মধ্যে বাস করছেন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার আলিয়ারপুরের আক্তার হোসেন ও তার ভাই মামলার বাদী আব্দুর রশিদ।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, জমিজমা বিরোধের জের ধরে মাঠে চাষ করার সময় ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ দলবদ্ধ হয়ে আক্তার হোসেন ও আব্দুর রশিদের পরিবারের ওপর হামলা করে একই এলাকার মৃত নেছার আলীর ছেলে দবির, খলিলুর, বাবলু ও শাহাদত এবং তার লোকজন। এসময় আক্তার হোসেনের ছেলে সুজনসহ বেশ কয়েকজনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আক্তার হোসেনের ছেলে সুজন। এঘটনায় চাচা আব্দুর রশিদ বাদী হয়ে দবির, খলিলুর, বাবলু ও শাহাদতসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
তারা আরও অভিযোগ করেন, সুজন হত্যা মামলা চলাকালীন ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর পাশেই তারাশ থানার এলাকার খোলাবাড়িয়ার কালভার্ট এলাকায় সুজন হত্যা মামলার অন্যতম আসামি শফিকুল ইসলামের বাবা ইয়াছিন আলীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এঘটনায় সুজন হত্যা মামলার বাদী আব্দুল রশিদ, নিহত সুজনের বাবা আক্তার হোসেনসহ ১১ নাম উল্লেখ্য করে মামলা দায়ের করেন শফিকুল ইসলাম। এতে স্বাক্ষী করা হয় সুজন হত্যা মামলার আসামিদের। ফলে পুলিশের সন্দেহ হলে শফিকুলের চাচাতো ভাই শাহাদৎ এবং ফরিদুল ইসলামকে আটক করে পুলিশ। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে নিজের চাচাকে হত্যার কথা স্বীকার করেন তারা। এরপর পুলিশ আদালতে চার্জশিট দিলে বাদী শফিকুল ইসলাম সেটি আবেদন করে পিবিআইসহ বিভিন্ন সংস্থায় হস্তান্তর করে হয়রানি করছেন। এছাড়াও ভুক্তভোগী আক্তার হোসেন ও আব্দুর রশিদের নামে দেয়া লুটপাট , ভাঙ্চুর ও মিথ্যা মামলায় খালাস পাওয়ার পর আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন শফিকুল ইসলাম ও তার লোকজন।
ভুক্তভোগী আক্তার হোসেন ও আব্দুল রশিদ বলেন, এখনও তারা হুমকি দেয় আমাদের ছেলের হত্যা মামলা তুলে নিতে। এলাকায় শান্তিতে বসবাস করতে পারি না। লুটপাট ও ভাংচুরের মিথ্যা মামলা থেকে খালাস পেয়েছি। আর ইয়াছিনকে যে তার ছেলে-ভাতিজারাই হত্যা করেছে সেটি পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে। এরপরই তারা আমাদের ছেলে সুজন হত্যা মামলা প্রত্যাহারের জন্য নানা হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছেন। আমরা নিড়িহ মানুষ। সব সময় আতঙ্কে থাকি।
এবিষয়ে অভিযুক্ত শফিকুল ইসলাম বলেন, তাদের সঙ্গে আমাদের পুর্ব পুরুষ থেকে জমিজমা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এর মাঝে আক্তার হোসেনের ছেলে সুজনকে একটি মহল হত্যা করে। আমরা তখন এলাকায় ছিলাম না। এরপর আমরা বগুড়া কাজে গেলে রাতের অন্ধকারে আমার পিতাকে কে বা কাহারা হত্যা করে আমরা বিষয়টি জানি না।
রাতের আধারে আমার বাবাকে হত্যা করা হলে পুর্ব বিরোধের জন্য আমরা সন্দেহ করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেই। বর্তমানে তাদের কোনভাবেই হয়রানি করা হচ্ছে না।
সিরাজগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মামলাটির তদন্ত চলছে। অধিকতর তদন্ত করে মূল ঘটনা উদঘাটনের চেষ্টা চলছে। তবে যেহেতু মামলাটি তদন্তাধীন আছে তাই এই মুহুর্তে এর চেয়ে বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না।