
শেখ হাসিনার পতন আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিশেষ ভুমিকা রাখা ও কাঁদুনি গ্যাসে চোখে আঘাত প্রাপ্ত রিক্সা চালক দুখু মিয়ার দুঃখ ঘুচাতে এক লাখ ১০ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সা প্রদান করা হয়েছে।
আজ (০৮ এপ্রিল)বিকেলে পাবনার ঈশ্বরদী সরকারি সাঁড়া মাড়োয়ারী স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মাদককে না বলুন “ মানাব” এর উদ্যোগে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে অংশ গ্রহনকারী শিক্ষার্থীদের পরিবারের আর্থিক সহযোগিতায় ক্রয়কৃত রিক্সা আনুষ্ঠানিকভাবে দুখু মিয়ার হাতে তুলে দেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুখু প্রামানিক (৫২) ঈশ্বরদী শহরের একজন রিক্সা চালক। উপজেলার সাঁড়া ইউনিয়নের গোকুলনগর এলাকায় তার বাড়ি। ছোট বেলায় দিন মজুর বাবা লালু প্রামানিক বড় তিন মেয়ে ও ছোট এক মাত্র ছেলে দুখুকে রেখে মারা যান। এই কারণে লেখা পড়া করার সুযোগ হয়নি দুখুর। ছোট বেলা থেকেই সংসারের হাল ধরতে হয়ে দুখুর। অতি দুঃখ ও কষ্টের মধ্যে মা ও বোনদের নিয়ে সংসার চালানোর কারণে এলাকাবাসীর নিকট দুখু প্রামানিক হয়ে উঠেন দুখু মিয়া। প্রথমে অন্যের জমিতে দিন মজুরের কাজ করতেন। পরে ১৯৮৯ সাল থেকে রিক্সার প্যাডেলে পা রাখেন দুখু। অন্যের নিকট থেকে দৈনিক জমার চুক্তিতে রিক্সা চালিয়ে আসছিলেন দুখু। বোনদের বিয়ে দিয়েছেন দুখু। নিজেও করেছেন বিয়ে। শারিরিক প্রতিবন্ধি ষোল বছরের এক ছেলেসহ তিন নিয়ে নিয়ে দুখুর ৬ জনের সংসার। দিন চলে কষ্টে। এরমধ্যেই শেখ হাসিনার পতনের দাবীতে ডাকা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেন দুখু। পাবনার ঈশ্বরদী থেকে রিক্সা চালানো বাদ দিয়ে ঢাকার মতিঝিলে ছাত্রদের আন্দোলনে যোগ দেন দুখু। সেখানে পুলিশের কাঁদুনি গ্যাসে বাম চোখ ক্ষতি গ্রস্থ হয়। তখনও মানাবের পক্ষ থেকে তার চোখের চিকিৎসা করানো হয়। এরপর ঈশ্বরদীতেও ছাত্রদের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন দুখু। আওয়ামী ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, আওয়ামীলীগ ও তার সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীদের দেওয়া হুমকি, হামলা, মারপিট ও পুলিশী গ্রেফতারি ভয় উপেক্ষা করে আন্দোলনকারীদের সহযোগিতা করেন। আন্দোলনকারীদের রিক্সায় করে কর্মসুচির গোপন সভায় নিয়ে যেতেন। রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশের পরিকল্পনার খবর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পৌছে দিতেন রিক্সা চালক দুখু। বিষয়টি জানাজানি হলে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের দ্বারা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হন দুখু।
মাদককে না বলুন “ মানাব” সভাপতি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ঈশ্বরদীর প্রধান সংগঠক মাসুম পারভেজ কল্লোল বলেন, দুখু একজন প্রতিবাদী মানুষ। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পতন আন্দোলনে নিজের বিপদ জেনেও দুখু আন্দোলনরত শিক্ষাথর্ীদের রাতের আধারে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে আনা নেওয়া করেছেন। আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশী খবরাখবর এনে দিয়েছেন। আন্দোলনে তার এই অবদানের স্বীকৃতি প্রদানে আন্দোলনে অংশ গ্রহনকারী শিক্ষার্থীদের পরিবার, মানাব ও কিছু ব্যক্তির প্রদানকৃত আর্থিক সহযোগিতায় দুখুকে রিক্সাটি প্রদান করা হয়েছে।
মাসুম পারভেজ আরো বলেন, দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করছে অন্তবর্তিকালিন সরকার। এই সরকার ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রাণের ও রক্তের ফসল। এই কারণে আমরাও সরকারের উন্নয়ন যাত্রায় শরিক হতে ঈশ্বরদীর হত দরিদ্র রিক্সা চালক দুখুর সংসারের উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি রিক্সা প্রদান করেছি। দুখু এখন নিজস্ব রিক্সার মালিক। এই রিক্সা দিয়ে তার সংসারের দুঃখ ঘুচাতে পারবে এটায় প্রত্যাশা।
রিক্সা পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে দুখু মিয়া বলেন- আমি কখনো একটি রিক্সার মালিক হবো, এটা ভাবতেও পারেনি। মানাব ও বৈষম্য বিরোধী শিক্ষাথর্ীদের পরিবারের প্রতি আমি ও আমার পরিবার বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এই রিক্সা দিয়ে আমার সংসারের অভাব দুর হবে। আমার দুঃখ কষ্ট লাঘব হবে।
এই সময় মানাব ও বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সেলিনা আক্তার রিটা, আলেয়া পারভিন, মহসিনা আক্তার, শারমিন সুলতানা কাকলী এবং মানাব ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সংগঠনের সাদিকুল ইসলাম রাসেল, ফারজানা ফেরদৌস পুষ্প, মাহিম মেহরাব, তানজিদুর জামান দিহান, তাইয়্যিবা মাসুম, রুকাইয়া তানজিম, আবির হাসান, তামিম ইকবাল, মেহের হোসেন সৈকত, আসিফ ইসলাম তন্ময়, রায়হান আলী অনিক, শাওন,তাহারাব হাবিব,তাহসিন আহমেদ সিয়াম ও পুলক কুন্ডু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে রিক্সা চালক দুখু মিয়াকে মানাব ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে নতুন পাঞ্জাবী পড়িয়ে ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। এরপর তাকে স্বীকৃতিস্বরুপ ক্রেস্ট ও অটো রিক্সার চাবি প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য, এর আগেও মানাব আগুনে পুড়ে যাওয়া উপজেলা সাহাপুর পশ্চিমপাড়া এলাকার প্রতিবন্ধি আব্দুস সালামের বাড়ি প্রায় আড়াই লাখ টাকা খরচ করে নতুন করে নির্মাণ করে দিয়েছে।