বদলি ও পদোন্নতি নীতিমালা অমান্য অনৈতিক সুবিধা নিয়ে পাবনা সদর উপজেলায় বদলি হয়ে আসছে একেরপর এক বহিরাগত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান ও সহকারী শিক্ষকরা। দ্রুত বদলির আদেশ বাতিল দাবি করেছে ভুক্তভোগী শিক্ষকরা।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে পাবনার স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক সিনসা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে তারা অভিযোগ করে বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নীতিমালা অনুযায়ী উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের মোট পদের ৬৫% পদ পদোন্নতির মাধ্যমে ও ৩৫% পদ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পুরণের বিধান রয়েছে। কিন্তু পাবনা সদর উপজেলায় বছরের পর বছর ধরে এই নীতিমালার তোয়াক্কা না করে তথ্য গোপন করে, মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে কখনো কখনো স্বামী বা স্ত্রীর স্থায়ী ঠিকানা দেখিয়ে, কখনো বা কর্মস্থল বা অন্যান্য কারন দেখিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে শিক্ষক বদলী হয়ে পাবনা সদরে আসছেন।
দীর্ঘকাল প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি না হওয়া এবং নীতিমালা উপেক্ষা করে প্রধান শিক্ষকের শুণ্যপদগুলো বহিরাগত শিক্ষক এসে দখল করে নিয়েছে। বর্তমানে পাবনা সদরে মোট ১৮৫ টি প্রধান শিক্ষক পদের ৬৫% হিসাবে পদোন্নতির মাধ্যমে পুরণযোগ্য পদ ১২০টি। কিন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে প্রধান শিক্ষক পদে কর্মরত ১১৫ জনের মধ্যে কেউই পদোন্নতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক হয়নি। কর্মরত ১১৫ জনের মধ্যে ৪৪ জন বহিরাগত ও ৭১ জন সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত। বহিরাগত শিক্ষক ১০% আসার বিধান থাকলেও নীতিমালা বহির্ভূতভাবে এসেছে ৩৯.৬৩%। অর্থাৎ কর্মরত পদ হিসাবে ১১ জন বহিরাগত শিক্ষক আসার কথা থাকলেও সে স্থলে সদরে এসেছে ৪৪ জন প্রধান শিক্ষক। যা খুবই উদ্বেগের।
এই বৈষম্য নিরসনে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে দফায় দফায় মহাপরিচালকের দপ্তরে একাধিকবার আবেদন করেও কোন প্রতিকার পায়নি ভুক্তভোগী শিক্ষকরা।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দেড় থেকে ৩ লাখ টাকা দিয়ে বদলীর আদেশ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
লিখিত অভিযোগে আরও বলেন, পাবনা সদরে সহকারী শিক্ষকের ১১৮০টি পদের মধ্যে কর্মরত আছে ১১১৫ জন। ১০% কোটায় আন্তঃ বিভাগ, জেলা, উপজেলা বদলিতে ১১২ জনের স্থলে বিধি লঙ্ঘন করে এসেছেন ২৪৪ জন। অতিরিক্ত বদলি হয়ে আসায় এই হার ২২% অধিক হয়েছে। বিধিমালা অনুসারে পাবনা সদর উপজেলায় বহিরাগত আর কোন শিক্ষক বদলি হয়ে আসার সুযোগ নেই। তথাপি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, অনলাইন বদলি পক্রিয়া শুরুর (জানুয়ারী ও জুলাই মাসে) আগেই সুবিধালোভী চক্রটি অধিদপ্তরের অসাধু কর্মকর্তাদের মাধ্যমে অনৈতিক পন্থায় বিধিমালা অমান্য করে পাবনা সদরে প্রধান ও সহকারী শিক্ষক পদে বদলি হয়ে আসার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে চাটমোহর উপজেলার নেউতিগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোছাঃ শিউলী খাতুন পাবনা পলিটেকনিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং সুজানগর উপজেলার চরদুলাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক চঞ্চল কুমার সরকার উত্তর শালগাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলী হয়েছেন। উল্লেখ্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পলিসি এন্ড অপারেশন) তাপস কুমার আচার্য্য স্বাক্ষরিত ১২ ডিসেম্বরের উভয় অফিস আদেশে জনস্বার্থে জারিকৃত আদেশ অবিলম্বে কার্যকরের নির্দেশনা রয়েছে।
প্রধান শিক্ষক পদে ৩৫% কোটায় সরাসরি নিয়োগযোগ্য প্রধান শিক্ষকের কোন শুন্যপদ না থাকলেও চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে নীতিমালা লঙ্ঘন করে শালগাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক জনকে পদায়ন করা হয়েছে।
অনিয়মের ফলে একদিকে পাবনা সদরের সহকারী শিক্ষকেরা দীর্ঘকাল ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত রয়েছে, অপরদিকে সহকারী শিক্ষকের শুন্যপদগুলো বহিরাগত শিক্ষকের দ্বারা পূরণ হয়ে যাওয়ায় সদরের চাকুরী প্রত্যাশী মেধাবী ও যোগ্য স্থায়ী বাসিন্দারা নিয়োগ বঞ্চিত হচ্ছে। এই সব অবৈধ নিয়োগ দ্রুত বাতিলের দ্রুত দাবি জানিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, জীবন মাহমুদ, ইকবাল হোসাইন, ইমরুল হাসান সাকিব প্রমুখ।