আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পরও বহাল তবিয়তে চলছে পাবনার পদ্মা নদীর বালু উত্তোলন। কোনো ভাবেই থামছে না পাবনার বালুখেকোরা! মাঝে কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আবারও সেই বালু উত্তোলনের মহাকর্মযজ্ঞ চলছে। এতে নদীর তীরে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। কৃষকের শত শত বিঘা কৃষি জমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। বালু উত্তোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সদর উপজেলার দোগাছী ইউনিয়নের বিএনপিপন্থী সাবেক চেয়ারম্যান হযরত আলী।
পদ্মা নদীতে বালু উত্তোলনের এই মহা কর্মযজ্ঞ চলছে পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের চর ভবানিপুরে। সশস্ত্র পাহারায় দিনভর বালু উত্তোলন চলছে সেখানে। ভাড়াটিয়া এই সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন নাটোরের লালপুরের ইঞ্জিনিয়ার কাকন আলী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এর আগে পাবনার ভাঁড়ারায় আওয়ামী লীগ নেতাদের নেতৃত্বে বালু উত্তোলন চলছিল কিন্তু গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর দুই দফায় বন্ধ ছিল। পরে সেটির নিয়ন্ত্রণ নেন দোগাছী ইউনিয়নের বিএনপিপন্থী সাবেক চেয়ারম্যান হযরত আলীসহ কয়েকজন বিএনপি নেতা। দুই সপ্তাহ আগে তারা চর ভবানিপুরের পয়েন্টে এই কর্মযজ্ঞ শুরু করে। শতাধিক নৌকার মাধ্যমে প্রতিদিন ১৫-২০ লক্ষ টাকার বালু উত্তোলন হয়, যার ভাগবাটোয়ারার অংশ চলে যায় সংশ্লিষ্ট সকল মহলে। চর ভবানীপুরের পাশাপাশি তারা আবারও দোগাছী ও ভাড়ারা এলাকায় বালু উত্তোলনের জোর চেষ্টা করছেন।
মনিরুল মোল্লা, সুমন প্রমাণিক, সিরাজুল ইসলামসহ একাধিক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বলেন, ‘আমাদের শত শত বিঘা কলার বাগান নদীতে ধসে যাচ্ছে। আমরা কোথায় যাবো? সবাই তো জানে কিন্তু ব্যবস্থা নেয় না। আমরা সেখানে গিয়ে কিছু বললে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। আমাদের জমি, আমাদেরই বাগান এই বালু কাটার জন্য নদীতে চলে যাচ্ছে। আমাদের চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই বলার নেই।
তারা আরো বলেন, সরকার পরিবর্তন হয়ে ভেবেছিলাম এবার মনে হয় থামবে বালুখোকোরা। কিন্তু যেই লাউ সেই কদু। কোনো লাভ হয়নি, আওয়ামীলীগ থেকে বিএনপির হাত পরিবর্তন হয়েছে মাত্র।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, বিশাল এই বালু সিন্ডিকেটের সঙ্গে বিএনপির প্রভাবশালী এক কেন্দ্রীয় নেতার এক আত্মীয় ও জেলা বিএনপির সাবেক এক নেতাও জড়িত। এছাড়াও কুষ্টিয়ার একটি সিন্ডিকেটও রয়েছে এর পেছনে। কিন্তু মুল নেতৃত্বে দিচ্ছেন দোগাছী ইউনিয়নের বিএনপিপন্থী সাবেক চেয়ারম্যান হযরত আলী।
তবে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এটা পাবনা মধ্যে কাটা হচ্ছে না, এটা কুষ্টিয়ার হরিপুর এলাকায়। আমিও গিয়ে দেখেছিলাম। কৃষকরা ভুুলভাবে আমার নাম বলতেছে।’
এব্যাপারে লক্ষীকুণ্ডা নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আকিবুল ইসলাম বলেন, ‘কবে থেকে কারা করছে আমি কিছুই জানি না। আপনার কাছ থেকে শুনলাম। এর বেশি কিছু জানি না, আমার কাছে তথ্য নেই।’
এবিষয়ে পাবনা সদর উপজেলার নির্বাহী (ইউএনও) শামীমা সুলতানা বলেন, ‘আমরা জানি না, জানলে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতাম। এখন যেহেতু জানলাম আমরা অভিযান চালাবো। অবৈধ বালু মহলের ব্যাপারে আমাদের ডিসি স্যারের কঠোর নির্দেশনা আছে।’