রাজনীতির খোলস পাল্টিয়ে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠিত ও প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন বিতর্কিত শিক্ষক খন্দকার সিরাজুল ইসলাম মুরাদ। নারী কেলেঙ্কারি, অর্থ আত্মসাত, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, নিয়োগ বাণিজ্যসহ বহু ঘটনায় আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছেন একাধিক বার। এতে কলেজের সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে।
খন্দকার সিরাজুল ইসলাম মুরাদ এডওয়ার্ড কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও পাবনার সুজানগর উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের গাবগাছি গ্রামের সন্তান।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ২৪তম ব্যাচের বিসিএস ক্যাডার হিসেবে ২০০৫ সালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে যোগদান করার পর থেকে ক্যাম্পাসে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন মুরাদ। ২০০৮ সালে ক্ষমতার পটপরিবর্তনে তিনিও আওয়ামী লীগের পরিচয়ে ক্যাম্পাসে প্রভাব বিস্তার করেন কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৬ সালে তাকে নোয়াখালীর হাতিয়ায় স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। রহস্যজনকভাবে সেই রিলিজ বাতিল করে ঈশ্বরদী সরকারি কলেজে যোগদান করেন। সেখানেও নানা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে যান মুরাদ। বিতর্কের মুখে ২০১৮ সালে আবারও তাকে বদলি করা হয় নোয়াখালীর হাতিয়াদ্বীপ সরকারি কলেজে। পরে সেখান থেকে ক্ষমতা দেখিয়ে প্রথমে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া পরে আবারও ফিরে আসেন ঈশ্বরদী সরকারি কলেজে। গত বছরের ২ মে ঈশ্বরদী সরকারি কলেজ থেকে বদলি করে তাকে সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পদে পদায়ন করা হয়। এসব ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছেন তিনি পাবনা সদরের সাবেক এমপি গোলাম ফারুক প্রিন্স এবং পাবনা-২ আসনের সাবেক এমপি আহমেদ ফিরোজ কবির।
২০১৬ সালের নভেম্বরে এক ছাত্রীর সাথে শহরের একটি আবাসিক হোটেলে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়ার পর গণধোলাইয়ের শিকার হন। অনেক ছাত্রীকে দিয়ে তিনি অনৈতিক কাজ করান, প্রাইভেট পড়ানোর আড়ালে ছাত্রীদের সাথে নানা আপত্তিকর ছবি উঠা ও অনৈতিক সম্পর্কে জড়ানো; পরীক্ষা হলে পরীক্ষার্থীদের অর্থের বিনিময়ে নকলের অবাদ সুযোগ করে দেয়া, জাল সার্টিফিকেট তৈরি করা, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন দপ্তরে চাকুরি দেয়া, ক্ষমতা ও পেশী শক্তি প্রয়োগ করে চাহিদামাফিক কাজ বাগিয়ে নেয়া, বদলির পরেও এডওয়ার্ড কলেজের পরিচয় ও সিল ব্যবহার করে বিভিন্ন তদবির ও ব্যবসায়িক অনিয়মসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই যে তিনি করেননি। ২০১২ সালে নবীন বরণ অনুষ্ঠানে ভাড়াটে এক নর্তকীর সাথে খোলামেলা নাচে অংশ নেয়। খোলা মঞ্চে নর্তকীর সাথে শিক্ষকের বেলেল্লাপনা দেখে হতবাক হয় শিক্ষার্থীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক বলেন, যখন যে দল ক্ষমতায় আসে, তখন সে ওই দলের ক্ষমতাধরদের সাথে হাত মিলিয়ে অপকর্মের গডফাদারে পরিণত হন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের পর তিনি এখন বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে রাজনীতির খোলস পাল্টিয়ে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠিত ও প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। এই কাজে সহযোগিতা করছেন এডওয়ার্ড কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আব্দুল আউয়াল। ইতোমধ্যে তিনি তাদের নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ গোপন বৈঠকও করেছেন।
তবে বিষয়টি অস্বীকার করে অভিযুক্ত শিক্ষক খন্দকার সিরাজুল ইসলাম মুরাদ বলেন, ‘ঈশ্বরদীতে ৭ বছর থাকার পর গত এক বছর ধরে আমি এডওয়ার্ডে এসেছি। এরপর থেকে আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু ১০ বছর আগে, ৫ বছর আগের অভিযোগ দিয়ে পেপারকাটিং দিয়ে ঘাটাঘাটি করতেছে। কিন্তু রিসেন্ট আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ কেউ বলতে পারবে না।’
এবিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মাহবুব সরফরাজ মুঠোফোনে কথা বলতে রাজি হননি, তিনি অফিসে গিয়ে কথা বলতে বলেন।