শহর থেকে গ্রাম বা গ্রাম থেকে শহর প্রায় প্রতিটি মানুষই ভর্তার সাথে পরিচিত। ভাতের সঙ্গে ভর্তা খায়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন। তবে শহরের উচ্চ বিলাসী পরিবারের খাবার তালিকা থেকে হয়তো এখন ভর্তা হারিয়েই যাচ্ছে। এই সময়ের নতুন প্রজন্মের শহরমুখি শিশুদের খাবারের তালিকায় বাঙ্গালী খাবারের স্থানে জাগয়া করে নিয়েছে ফাস্টফুড, থাই, চাইনিজ বা ইটালিয়ান খাবার। সেই আধুনিক প্রজেন্মের কাছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য তুলে ধরতেই খাবারের মধ্যে অন্যতম উপকরণ ভর্তা নিয়ে ব্যতিক্রমী উৎসব হয়ে গেলো পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে। কলেজের রোভার স্কাউট গ্রুপের সদস্যদের উদ্যেগে দিনব্যাপী এই ভর্তা উৎসবের আয়োজন করা হয়। রোভার স্কাউট ভবনে এই আয়োজন দেখতে সেখানে উপস্থিত হন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও সাধারন শিক্ষার্থীরা ।
বুধবার (১০ জুলাই) দিনব্যাপী এই উৎসবের উদ্বোধন করেন কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মোঃ মাহাবুব সরফোরাজ। ব্যতিক্রমি এই ভর্তা উৎসবে ৫৫ ধরনের ভর্তা তৈরি করে নিয়ে আসেন রোভারের নারী সদস্যরা। নিজ নিজ বাড়ি থেকে এই ভর্তা তৈরি করে নিয়ে আসেন তারা। বহুল পরিচিত আলু, বেগুন, ডাল ভর্তার সাথে বেশ কয়েক প্রকার প্রকারের শাকের ভর্তা দেখা মেলে সেখানে। আধুনিকতার সাথে এখন হয়তো অনেকেই জানেন না সজনে পাতা, মানকচু, তিল, বাদাম, কলার মোচা, কলার খোসা, লাউয়ের খোসা, পটলের খোসাও ভর্তা খাওয়া হয়। শুধু সবজি ভর্তাই নয়, ছিলো ১০ প্রকারের মাছ ভর্তা, তিন প্রকারের মাংস ভর্তা। আয়োজন শেষে দুপুরে সকল শিক্ষার্থী ও আগত শিক্ষকদের সাথে নিয়ে সাদা ভাত ও ভর্তা দিয়ে আনন্দের সাথে আহার করেন তারা।
উদ্যেক্তা উম্মে জান্নাত তামান্না বলেন, সময়ের সাথে সাথে গ্রাম বাংলার খাবারের ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। বিদেশি খাবারের প্রতি আসক্ত হয়ে যাচ্ছে সবাই। হোটেল রেস্টুরেন্ট গুলোতে আমরা গেলে সব সময় চাইনিজ থাই ফুড অডার করছি। বর্তমান সময়ে শিশু থেকে অনেক উচ্চ বিত্ত পরিবারের সদস্যরা ভর্তা দিয়ে খেতে চাননা। তাই নতুন প্রজন্মের মাঝে ভর্তার বিষয়টি তুলে ধরার জন্যই আমাদেও এই আয়োজন।
রোভার স্কাউট দলের অন্যান্য সদস্যরা বলেন, ভর্তার সাথে আমাদের গ্রামীন মানুষের খুব ভালো ভাবে পরিচয় রয়েছে। কিন্তু আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যে সকল সবজি মাছ মাংস খাচ্ছি সেই খাবার দিয়ে সুন্দর করে পুষ্টিগুন সম্পন্ন ভর্তা তৈরি করে খাওয়া যায় সেটা অনেকেই জানিনা। তাই এই উৎসবের ম্ধ্যামে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য তুলে ধরতে চাই সবার কাছে।
রোভার স্কাউটের সম্পাদক প্রফেসর বেলাল হোসেন বলেন, ভর্তা উৎসব এর আগেও আমরা করেছি কিন্তু ছোট পরিসরে। তবে এই বছরে একটু পরিসর বৃদ্ধি করে করা হয়েছে। সকলে মিলে ভর্তা দিয়ে ভাত খেলাম মজা করে। আমাদের শিক্ষার্থীরা সব সময় যে নতুন কিছু নিয়ে ভাবেন সেটার উদাহরণ হতে পারে এই ভর্তা উৎসব ।
সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মোহম্মদ মাহাবুব সরফরাজ বলেন, দৈনন্দিন জীবনে পড়াশোনার পাশাপাশি এই ধরনের ব্যতিক্রমী আয়োজনকে আমরা সাধুবাদ জানাচ্ছি। এখানে একটি উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে ক্যাম্পাসে। শিক্ষার্থীরা আনন্দের সাথে যাতে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে সেই জন্য আমরা তাদের এই ধরনের কাজকে সব সময় উৎসাহিত করছি।
গত বছরে ছিলো এই আয়োজনের প্রথম বার এবার ছিলো দ্বিতীয়। ভর্তা উৎসবের সাথে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ও স্কাউট ভবন চত্বরের পাশে বেশ কিছু ফলজ, বনজ ও ফুলের গাছের চারা রোপণ করেন। এসময় কলেজের রোভার স্কাউট দলের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক ও রোভার স্কাউট সদস্যরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।