শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষ, ল্যাব ও লাইব্রেরি সংকট নিরসন, এনিম্যাল হাউজ প্রতিষ্ঠাকরণ, বোট্যানিক্যাল গার্ডেন প্রতিষ্ঠাকরণ সহ ছয় দফা দাবি নিয়ে মানববন্ধন করেছেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (২৬ আগস্ট) সকাল এগারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের মানববন্ধন শুরু হয় এবং দুপুর একটায় প্রশাসনের দাবি পূরণে আশ্বাসে তা শেষ হয়।
মানববন্ধনে ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের কাছে তাদের বিভাগের সংকটগুলো দ্রুত নিরসনের দাবি জানান। শিক্ষার্থীদের দাবি দীর্ঘদিন ধরে তাদের বিভাগে শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষ, ল্যাব, লাইব্রেরি রয়েছে। কিন্তু প্রশাসন এ সমস্যাগুলো নিরসনের আশ্বাস দিলেও সেগুলো পূরণ করেননি। বিভাগে বিভিন্ন সমস্যা থাকার কারণে গত ১৮ আগস্ট বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল ফার্মেসি বিভাগে অনার্সে শিক্ষার্থী ভর্তির নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। যেটি বিভাগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। যার কারণে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় মানববন্ধন করতে নেমেছেন।
দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মারুফ আকন্দ বলেন, আমাদের বিভাগে শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষ, ল্যাব এ সমস্যাগুলো অনেক দিনের। বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল ইতোমধ্যে আমাদের বিভাগে ভর্তি নিয়ে একটি আগামবার্তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দিয়েছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শিক্ষক সংকট, পাঁচটি ল্যাবরেটরি স্থাপন, প্রয়োজনীয় রাসায়নকি সামগ্রী পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখা রাখা, সমৃদ্ধ লাইব্রেরি তৈরি করতে না পারলে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ফার্মেসি বিভাগে ভর্তি হতে পারবেন না। এ নিয়ে আমরা এখন অস্তিত্ব সংকটে আছি। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি নিষেধাজ্ঞা আসার পরপরই প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছেন এবং সমস্যাগুলো নিরসনের জন্য শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু আমাদের প্রশাসন এখন পর্যন্ত আমাদের সাথে কোন কথা বলেনি। প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবিদাওয়া পৌঁছে দিতে আমরা আজকে এখানে মানববন্ধন করতে নেমেছি।
প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান ইমা বলেন, আমাদের সাতটা ব্যাচের জন্য তিনজন শিক্ষক। একজন শিক্ষক প্রতি ব্যাচে দুটি করে কোর্স নিয়েও সবগুলো কোর্স সম্পন্ন করতে পারছে না। আমাদের মাত্র একটা ক্লাসরুম আছে, এটা দিয়ে সাতটি ব্যাচের ক্লাস ঠিক করে করা সম্ভব হচ্ছেনা। আমাদের সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করে দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
তবে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে বিব্রত বিভাগের শিক্ষকরা। সহকারি অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমে আমাদেরকে লজ্জায় ফেলেছে। অল্প কয়েকজন শিক্ষক নিয়ে আমরা দিনরাত ওদের জন্য পরিশ্রম করে যাচ্ছি যাদের তাদের কোন সময় নষ্ট না হয়। এরপরও ওরা মাঠে নেমেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করে দেওয়ার কথা বলেছেন। তাদের ওপর আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা আছে। সমস্যাগুলো সমাধান করে দেওয়ার জন্য তারা আমাদের আলাদা নজরে দেখা শুরু করেছে।
বিভাগের চেয়ারম্যান ড. শরিফুল হক বলেন, যে সমস্যাগুলো নিয়ে শিক্ষার্থীরা কথা বলেছেন এটা শুধু আমাদের বিভাগের সমস্যা না, এটা একটা দেশীয় সমস্যা। এ সমস্যাগুলো সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে কম বেশি আছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমাদের সমস্যাগুলোর বিষয়ে জানিয়েছি। প্রশাসনে যারা আছেন তারা আন্তরিকতার সাথে বিষয়গুলো দেখছেন। আমরা আশা করি উনারা সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান দিবেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুনের তাৎক্ষণিক কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে গত মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না করেই অনেকগুলো বিভাগ খোলা হয়েছে। ফলে সবগুলো বিভাগে নানা রকমের সংকট রয়েছে। কেবল আমাদের নয়, নতুন সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের একই সংকট। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুততম সময়ে এসব সংকট কাটিয়ে ওঠার। ফার্মেসি কাউন্সিল আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগের সংকট নিরসনের যে শর্তগুলো দিয়েছেন আমরা সেগুলো নিয়ে অবগত আছি। তবে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের ফার্মেসি কাউন্সিলের শর্ত পূরণ করা কঠিন, তারপরেও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো শর্তগুলো পূরণ করতে।