১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনের সামনে গুলিবিদ্ধ পুলিশ অফিসার বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম খান আর নেই। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ৫০তম স্বাক্ষী ছিলেন।
বুধবার ভোরে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নুরুল ইসলাম খান ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৯৪ বছর। নুরুল ইসলাম খানের পুত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) নাহিদ খান জানিয়েছেন, তাঁর পিতা বাধ্যর্কজনিত কারণে ইন্তেকাল করেছেন। বাদ আসর সিএমএইচ মসজিদে নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় এই হত্যার একমাত্র জীবিত সাক্ষী ডিএসপি নুরুল ইসলাম। কথা বলেছি সেই দিনের হত্যাকান্ডের সেই প্রত্যক্ষ সাক্ষী বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম খান (অবঃ পুলিশ সুপার) যিনি ১৯৭৫ সালের সে সময় ধানমন্ডির ৩২ নং বাসায় পুলিশের জৈষ্ঠ্য অফিসার (ডিএসপি) হিসেবে নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিলেন। তার মুখ থেকে জানা যায় বঙ্গবন্ধু সহ তার পরিবার পরিজনসহ সবাইকে কিভাবে হত্যা করা হয়।
সেই ভয়াবহ নৃশংসতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন,
“রাত তখন ৪টা ৪৫ মিনিট হঠাৎ করেই দোতলায় বঙ্গবন্ধুর কন্ঠস্বর শোনা যায় তিনি উত্তেজিত হয়ে জোরে জোরে কারো সাথে কথা বলছিলেন। তিনি বলছিলেন কেন দুস্কৃতিকারীরা আসবে? আপনারা কি করেন। আপনারা থাকতে কেমন করে দৃস্কৃতিকারী আসতে পারে? এরপর জোরে ফোন রেখে দেয়ার শব্দ পেলাম। এর একটু পরেই ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ির উপর প্রচন্ড গোলাগুলি শুরু হল। মুহু মুহু গুলির শব্দে চারদিক প্রকম্পিত হতে লাগল এবং ধানমন্ডির ৩২ নং বাড়িতে গুলি এসে লাগল। আমি দৌড়ে গেটের কাছে গেলাম গেটে কর্তব্যরত পুলিশ ইন্সপেক্টর আমাকে জানালেন চারদিক হতে ফায়ারিং শুরু হয়ে গেছে, আমি আমার সকল পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দিলাম প্রতিরক্ষা অবস্থানে ফায়ার শুরু করার জন্য, যদিও অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছিল না,কিন্তু উৎস লক্ষ্য করে আমাদের পুলিশ বাহিনী ফায়ারিং শুরু করেছিল। মিনিট পাঁচেক পরে ফায়ারিং একটু কমে আসলে দেখি বঙ্গবন্ধু নীচে নেমে এসেছেন।আমি বঙ্গবন্ধুর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম, বঙ্গবন্ধু বললেন ফোর্স পাঠানোর কথা এক্ষনি এসে যাবে বলেই তিনি পিএ মোহিতুল ইসলামের অফিস রুমে প্রবেশ করলেন।
পিএকে আর্মি চীফকে ফোন করতে বললেন, কিন্তু সংযোগ ততক্ষণে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু নিজেও ফোন নিয়ে চেষ্ঠা করলেন কিন্তু কাউকে পেলেন না।বঙ্গবন্ধু বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন।আমাকে জিজ্ঞেস করলেন এত গুলি কিসের? আমি বললাম বাইরে থেকে হামলা হয়েছে,আমরা পাল্টা গুলি করছি। আমাদেরকে তিনি গুলি চালানোর নির্দেশ দিলেন যে আর্মিরা কি এসেছে নাকি সাহায্য করার জন্য সেটা দেখতে।বঙ্গবন্ধু উপরে উঠে গেলেন,আমার একজন সিপাই এসে জানাল খাকি এবং কালো পোশাকে সৈন্যরা ক্রল করে এগুচ্ছে। বঙ্গবন্ধু উপরে উঠে যাবার ৩/৪ মিনিট পর বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামাল নিচে নেমে এলেন,আমি শেখ কামালের কাছে গেলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আর্মি এসে গেছে কিনা? তিনি বললেন সেনা বাহিনীর লোকজন আমাদের সাহায্য করার জন্য আসছে।শেখ কামাল আমাকে নির্দেশনা দেন ফায়ারিং বন্ধ করেন,না হলে সেইম সাইড হয়ে যাবে।
বলেই তিনি প্রধান ফটকের কাছে গেলেন,ওখানে কাউকে না পেয়ে শেখ কামাল প্রধান ফটক হতে ফিরে এসে বারান্দায় দাঁড়ালেন, আমি এবং মোহিতুল ইসলাম সাথে ছিলাম। হঠাৎ করেই ৭/৮ জনের একটা অস্ত্রধারী গ্রুপ অতর্কিতে বাসায় প্রবেশ করেই আমাদেরকে বলল হ্যান্ডস আপ , শেখ কামাল নিজের পরিচয় দিতেই একজন দুস্কৃতিকারী কামালের পায়ে গুলি করল।পরে ঘাতকরা শেখ কামালকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এরপর আমার দিকে অস্ত্র তাক করে বলে তোমার নির্দেশে পুলিশ গুলি করেছে ওদের সবাইকে মেরে ফেলা হউক। এই কথা শুনে একজন ঘাতক আমার বুকে গুলি করলো আল্লাহর অশেষ কৃপায় এটা ব্লাস্ট হয়নি, তবে একটা অংশ এসে আমার হাটুতে লাগল এবং দ্বিতীয় গুলি আমার ডান পায়ের আঙ্গুল ভেঙে জুতার এক প্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করে অন্য প্রান্ত দিয়ে বের হয়ে গেল। আমার হাটু এবং পা দিয়ে রক্ত ঝরছিল। এরমধ্যে প্রায় ১০০ জনের মত আর্মির লোক ভারী অস্ত্রহাতে বাসায় ঢুকে পড়ে। আমার এবং পিএ মোহিতুল ইসলামের উপর আবারও গুলি চালানো হয়,কিন্তু মোহিতুল ইসলাম কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে পড়ে এই দৃশ্য দেখে,আমি তাকে বাঁচানোর জন্য ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেই,এর মধ্যে সব পুলিশকে একসাথে জড়ো করা হয় মেরে ফেলার জন্য।
আমাদেরকে লাইনে দাঁড় করিয়েই এসআই সিদ্দিকুর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যা করে।১০ থেকে ১২ জনের একটি গ্রুপ যারা উপরে উঠেছিল তারা বলছিল বাড়ি তো নয় যেন দূর্গ। এর মধ্যে দুজন আর্মির সিপাই শেখ রাসেলকে উপর থেকে নামিয়ে আমাদের কাছে নিয়ে এল, ছোট্ট রাসেল এসে আমার পাশে মোহিতুল ইসলামকে জড়িয়ে ধরে বললেন চাচা আমাকে বাঁচান। একজন সিপাহি রাসেলকে উপরে নিয়ে যেতে এলে রাসেল জিজ্ঞাসা করে আমাকে মারবে না তো, তখন সিপাহি বললো না মারবো না। তাহলে আমাকে আমার বাবা-মার কাছে নিয়ে যান। সিপাইরা শেখ রাসেলকে উপরে নিয়ে গিয়ে তাকেও নৃশংসভাবে হত্যা করে। উপরে তখন প্রচন্ড গোলাগুলি চলছে। একজন অফিসার উপর থেকে নিচে গেটের সামনে এসে বলে ALL are killed. What is to be done about the dead bodies. দুবৃত্তদের নৃশংসতায় শেষ হয়ে গেল যিনি দেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন তার প্রাণ।”
নুরুল ইসলাম খান বঙ্গবন্ধু হত্যার একজন প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী। মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম খান ১৯৭১ সালে পাবনা জেলায় ডিস্ট্রিক ইন্টিলিজেন্ট অফিসার-১ হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। পাবনার পুলিশ আনসার এবং জনতাকে একত্রিত করে পাবনার পুলিশ লাইনের যুদ্ধ, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ যুদ্ধ, মুলাডুলি-দাশুড়িয়া সড়কের এ্যাম্বুস এবং নগরবাড়ী যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক অবস্থায় সবচেয়ে বেশি পাকিস্তানি সেনা পাবনার যুদ্ধে নিহত হয়েছিল। পাকিস্তানি বাহিনী পুনরায় পাবনা দখল করে নিলে নুরুল ইসলাম খান পাবনা থেকে পালিয়ে যান। পাকিস্তান সরকার রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে নুরুল ইসলাম খানকে চাকুরিচ্যুত করে এবং তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করে। পরে নিজ এলাকা ঢাকার নবাবগঞ্জে চলে আসেন এবং নবাবগঞ্জে সবাইকে একত্রিত করে মুক্তিযোদ্ধা দল গঠন করেন তার দলে প্রায় ১০০ মুক্তিযোদ্ধা ছিল। নবাবগঞ্জ থানার পশ্চিমাঞ্ঝলে কমান্ডার হিসেবে পরবর্তী সময় পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে অনেক রক্তক্ষয়ী অপারেশন করেন। নুরুল ইসলাম খানের মেয়ে নাসিমা খানও সক্রিয় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন,মেয়েদের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন বিভিন্নভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবার পরিজনদের নৃশংসভাবে হত্যার পর আহত অবস্থায় ধানমন্ডি থানায় প্রথম বঙ্গবন্ধু হত্যার ডায়েরি করেন নুরুল ইসলাম খান, এবং ধানমন্ডি থানা পুলিশের সহযোগিতায় ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার অন্যতম স্বাক্ষী ছিলেন।এই সাক্ষী দেওয়ার জন্য তার ওপর দুইবার আক্রমণ হয়। প্রথমবার আক্রমণে পুলিশের জিপে দুর্ঘটনা ঘটানো হয় সেখান থেকে তিনি প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু পরবর্তী সময় সাক্ষী দিয়ে ফেরার পথে সন্ত্রাসীরা গাজীপুরে তার ওপর আক্রামণ চালায় এবং ইট দিয়ে মাথা থেতলে দেয়। ২১ দিন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকার পর তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট রাতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের নৃশংসতার শিকারদের মধ্যে বর্তমানে একমাত্র জীবিত স্বাক্ষী এই বীর মুক্তিযোদ্ধা-পুলিশ অফিসার (৯৪) বছর বয়সী নূরুল ইসলাম খান বর্তমানে আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলেসের উপশহর ভ্যালিতে মেয়ের বাসায় থাকেন পারিবারিক জীবনে নূরুল ইসলাম খানের পাঁচ ছেলে ও চার মেয়ে, তার লেখা বই “মুক্তিযুদ্ধ এবং আমি” এক যুগান্তকার রচনা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবার পরিজনদের নৃশংসভাবে হত্যার পর আহত অবস্থায় ধানমন্ডি থানায় প্রথম বঙ্গবন্ধু হত্যার ডায়েরি করেন নুরুল ইসলাম খান। পরে ধানমন্ডি থানা পুলিশের সহযোগিতায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার অন্যতম স্বাক্ষী দেওয়ার জন্য তাঁর ওপর দুইবার আক্রমণ হয়। প্রথমবার আক্রমণে পুলিশের জিপে দুর্ঘটনা ঘটানো হয় সেখান থেকে তিনি প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু পরবর্তী সময় ১৯৯৯ সালে সাক্ষ্য দিয়ে ফেরার পথে সন্ত্রাসীরা গাজীপুরে তার ওপর আক্রামণ চালায় এবং ইট দিয়ে মাথা থেতলে দেয়।২১ দিন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকার পর তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম খান ১৯৭১ সালে পাবনা জেলায় ডিস্ট্রিক ইন্টিলিজেন্ট অফিসার-১ হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে উজ্জীবিত হয়ে দেশের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। পাবনার পুলিশ আনসার এবং জনতাকে একত্রিত করে পাবনার পুলিশ লাইনের যুদ্ধ, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ যুদ্ধ, মুলাদিয়া দাসুরিয়া সড়কের এ্যাম্বুস এবং নগরবাড়ী ঘাটে সম্মুখ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন।
মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক অবস্থায় সবচেয়ে বেশি পাকিস্তানি সেনা পাবনার যুদ্ধে নিহত হয়েছিল।পাকিস্তানি বাহিনী পুনরায় পাবনা দখল করে নিলে নুরুল ইসলাম খান পাবনা থেকে পালিয়ে যান। পাকিস্তান সরকার রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে নুরুল ইসলাম খানকে চাকুরিচ্যুত করে এবং তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করে।পরে নিজ এলাকা ঢাকার নবাবগঞ্জে চলে আসেন এবং নবাবগঞ্জে সবাইকে একত্রিত করে মুক্তিযোদ্ধা দল গঠন করেন তার দলে প্রায় ১০০ মুক্তিযোদ্ধা ছিল। নবাবগঞ্জ থানার পশ্চিমাঞ্ঝলে কমান্ডার হিসেবে পরবর্তী সময় পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে অনেক রক্তক্ষয়ী অপারেশন করেন। নুরুল ইসলাম খানের মেয়ে নাসিমা খানও সক্রিয় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন,মেয়েদের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন বিভিন্নভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম খান ১৯৩০ সালের ২ জানুয়ারি ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার নয়নশ্রী ইউনিয়নে রাহুতহাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৩ সালে তিনি সাব ইন্সপেক্টর হিসেবে পুলিশে বিভাগে যোগদান করেন। ১৯৮৬ সালে এসপি হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। পারিবারিক জীবনে নূরুল ইসলাম খানের পাঁচ ছেলে ও চার মেয়ে,তার লেখা বই মুক্তিযুদ্ধ এবং আমি এক যুগান্তকারী রচনা।