দেশব্যাপী চলামান বিএনপি ও জামায়াতের ডাকা হরতাল অবরোধ চলাকালে পাবনা ঈশ্বরদী রেল জংশন এলাকাতে থেমে থাকা ট্রেনে অগ্নি সংযোগের ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত স্থানীয় বিএনপি কর্মী মোঃ সুমন (৩২)কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সুমন ঈশ্বরদী পৌর এলাকার রহিমপুর গার্লস স্কুল মহল্লার তাইজুল ইসলামের ছেলে। ২৯ নভেম্বর (বুধবার) বিকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ঈশ্বরদী থানাধীন ফতে মোহম্মদপুর রেলওয়ে হাসপাতালের সামনে থেকে ঘটনার দুইদিন পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সুমনের নামে স্থানীয় থানাতে একাধিক অস্ত্রমামলা রয়েছে বলে জানান পুলিশ।
এই ঘটনার বিষয়ে ৩০ (নভেম্বর) বৃহঃবার (বিকালে) পাবনা জেলা পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, গত ২৭ নভেম্বর রাতে বিএনপি ও জামায়াতের ডাকা অবরোধ চলাকালীন সময়ে ঈশ্বরদী রেল জংশন এলাকাতে থেমে থাকা (৬ ডাউন) ট্রেনে পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় দূরবৃত্তরা। ট্রেনটি ঈশ্বরদী রেলস্টেশন থেকে কিছুটা দূরে ওয়াশপিটে পরিস্কারের কাজ করছিলো। ট্রেনটি পরিস্কার শেষে পরেরদিন ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে রেল স্টেশনে নেয়ার অপেক্ষায় ছিলো। কিন্তু রাত সারে ৮ টার দিকে কিছু অজ্ঞতানামা দুস্কৃতিকারী নাশকতার উদ্দেশ্যে ট্রেনে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরি দিয়ে পালিয়ে যায়।
এই ঘটনায় রেলওয়ে থানা একটি মামলা দায়ের করলে অভিযানে নামে পুলিশ। পাবনা জেলা পুলিশের একাধিক চৌকস দল ঈশ্বরদী থানা এলাকাতে অভিযান শুরু করে। এসময় ট্রেনে আগুন দিতে গিয়ে আগুনে দগ্ধ সুমন বাসা থেকে ওষুধ কিনতে আসলে সেই সূত্র ধরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতাকৃত সুমনের দেয়া তথ্যসূত্রে ট্রেনে আগুন দেয়ার রহস্য বেরিয়ে আসে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের কাছে ঘটনার সত্যতা শিকার করেছেন সুমন।
পুলিশ সুপার বলেন, অর্থের বিনিময়ে স্থানীয় বিএনপি নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ট্রেন বহরে হামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী জাকারিয়া পিন্টর আপন দুই ভাই এই ঘটনার সাথে জড়িত রয়েছে। তারা হলেন, ঈশ্বরদী থানা সেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মোঃ মেহেদী হাসান ও পৌর যুব দলের আহবায়ক জাকির হোসেন জুয়েল। তাদের নির্দেশে ওইদিন ট্রেনে আগুন দিয়ে নাশকতার সৃষ্টি চেষ্টা করে তারা। এই ঘটনার সাথে আরো বেশ কয়েকজন জড়িত রয়েছেন তারা হলেন, শৈলপাড়া এলাকার মোঃ আবুল কালামের ছেলে পৌর যুবদলের সাধারন সম্পাদক মোঃ শাহীন, একই এলাকার মোঃ মকলেছ হোসেনের ছেলে মোঃ মামুন হোসেন, পৌর যুবদলের সদস্য মৃত ফরিদ হোসেনের ছেলে মোঃ রুবেল, রহিমপুর এলাকার পিতা অজ্ঞাত মোঃ ও রাসেল। তারা অর্থের বিনিময়ে নাশকতার উদ্দেশ্যে ট্রেনে আগুন দিয়েছিলেন বলে জানান পুলিশ সুপার। এই ঘটনার সাথে জড়িত আসামী ও পরিকল্পনাকারীদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। আটক সুমনকে আইনগত পক্রিয়া শেষে রেলওয়ে পুলিশের কাছে হস্তান্ত করা হয়েছে।
এই অভিযানের সমন্বয় করেন, জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার গোস্বামী, অফিসার ইনচার্জ অরবিন্দ সরকার, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ মনিরুল ইসলাম সহ জেলা পুলিশের বেশ কিছু সদস্য।
দুস্কৃতিকারীরা যাতে পূণরায় ট্রেনে আগুন দিতে না পরে সেই জন্য ঈশ্বরদী রেল জংশন এলাকাতে অতিরিক্ত আলোর ব্যবস্থা, সিসি টিভি স্থাপন, সাদা ও পোষাকী পুলিশ সহ আনসার সদস্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। একই সাথে পুরো জংশন এলাকাকে নিরাপত্তার মধ্যে আনার জন্য চারপাশে কাটাতার স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।