ডিসকভারি চ্যানেলে বিদেশীদের নানা প্রজাতির পোকামাকড় খাওয়া দেখে অনুপ্রানিত হয়ে তা রপ্ত করায় এখন আলোচিত পাবনা সদরের ঘোড়াদহ গ্রামের কাঠমিস্ত্রী আকরাম প্রামানিক। নিজ পেশা ছেড়ে পোকামাকড় খাওয়ার নেশায় মত্ত হয়ে উঠেছেন চার কন্যা সন্তানের জনক। আর এ ঘটনা স্বচক্ষে দেখতে তার বাড়িতে ভীড় জমাচ্ছেন নানা শ্রেণির উৎসুক মানুষ।
পাবনা সদর উপজেলার ভাড়ারা ইউনিয়নের ঘোড়াদহ গ্রামের মৃত জব্বার প্রামানিকের ছেলে ৪ কন্যা সন্তানের জনক আকরাম আলী। জীবনের শুরুটা কাঠ মিস্ত্রি হিসেবে চললেও মাঝপথে এসে তিনি এন্টেরিয়র কাজে সম্পৃক্ত হন। বয়স ৫০ বছরের কাছাকাছিতে চলে এসেছেন।
২০০২ সালে একটি সাদাকালো টেলিভিশন কিনে দেখা শুরু করেন ডিসকাভারী চ্যানেল। সেখানে নিয়মিত দেখতে থাকেন বিদেশীদের পোকামাকড় খাওয়া। শুরুটা হয় জ্যান্ত কাকড়া খাওয়া দিয়ে। পর্যায়ক্রমে তিনি কেঁচো, কাঠের পোকা, সাপ, কুচিয়া, তেলাপোকা, ইন্দুর, বিভিন্ন প্রজাতির কাঁচা মাছ, গবরের পোকাসহ নানা পোকামাকড়।
বর্তমানে সব কাজ কর্ম ছেড়ে তিনি এই পোকামাকড় খাওয়ার নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছেন। অভাবী সংসারে বিষয়টি নানা ভাবেই দেখছেন পরিবারের স্বজনসহ আশপাশের মানুষ। এলাকায় কাঠ মিস্ত্রির কাজ ছেড়ে চলে যান ঢাকাতে। সেখানে প্রধান নির্বাচন কমিশন কার্যালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান বিচারপতির ভবন, এনএসআই কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারী স্থাপনায় এন্টিরিয়র কাজ করেছেন।
পোকামাকড় খাওয়ার পর যখন তিনি পুরোপুরি অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার পরামর্শের জন্য বিভিন্ন ডাক্তার ও ঔষধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে পরামর্শ চেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন।
ডিসকভারী আকরাম আলীর দাবী, তিনি একজন দিন দরিদ্র মানুষ। খুব কষ্টে তার সংসার চলে। দুটো কন্যার বিয়ে দিয়েছেন। আরও দুই কন্যা রয়েছে। তারা প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে পড়ালেখা করে। নিজের ক্ষমতা নেই একটি স্মার্ট বা এন্ড্রোয়েড ফোন কেনার। সরকারী বেসরকারী ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এবং সঠিক গাইড লাইন পেলে এটি তিনি দেশ থেকে বিদেশের মধ্যে আলোড়ন তুলতে চান।
স্থানীয়দের দাবি, সরকারি বেসরকারিভাবে আকরামকে পৃষ্ঠপোষকতা দিলে হয়তো এই পাগলামিটা দেশের জন্য বিশ্বের কাছে রোল মডেল হবে। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশেও ডিসকভারি চ্যানেলের দর্শক হতে পারবে অন্যদের জলজ্যান্ত অভিনেতা।
পাবনার বেসরকারি হাসপাতাল সিমলা হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন ডা. সরোয়ার জাহান ফয়েজ বলেন, প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানুষ বিভিন্ন প্রাণী কাঁচা খেতো। যুগের পরিবর্তন আর স্বাদের জন্য রান্না করে খায়। গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি ছাড়া তেমন ক্ষতি হয় না মানবদেহের জন্য।
তিনি বলেন, এগুলো একটু ব্যতিক্রমী। তবে এ কাজ করার আগে নিজের মনের মধ্যে সেই অনুভূতি সংরক্ষণ করতে হয়। যা সে রপ্ত করতে পারে জন্য এটা করাটা তার জন্য আহামরি কিছু নয়। নিজেকে জাহির করার জন্য আজকাল মানুষ অনেক কিছুই করে। যদি তিনি সেই লক্ষ্যে করেন, তাহলে তাকে সেই পরামর্শ দেয়া দরকার যে কোনো প্রাণীর কোনটুকু খাওয়া যাবে, কোনটুকু খাওয়া যাবে না। তবে এটা কোনো শুভ বুদ্ধির কাজ নয়।
তবে এই ঘটনা দেখে যতই গা ঘিনঘিন করুক, মানুষের ইচ্ছাশক্তি থাকলে যে অসাধ্যকে সাধ্য করা সম্ভব তার জীবন্ত উদাহরণ পাবনার আলোচিত আকরাম প্রামানিক ওরফে ডিসকভারী আকরাম, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই।
কিন্তু, সবশেষ কথা হলো অহেতুক নিজের শখ পুরন করতে এভাবে জীবন্ত বন্যপ্রানী হত্যা করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ সেটাও হয়তো আমাদের অনেকেরই অজানা।