
পাবনার ৯ উপজেলায় জেলা প্রশাসনের তালিকাভুক্ত ১৬৫ ইটভাটার মধ্যে ১৪১ টি অবৈধভাবে চলছে। এরমধ্যে ৯২ টিতে কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে বলে শনাক্ত করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এতে কৃষি ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে । তবে এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন।

জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, ২০২০ সাল পর্যন্ত জেলায় ১৬৫ টি ইটভাটা নিবন্ধিত হয়েছে। কিন্তু পরবর্তিতে এর মধ্যে মাত্র ২৪ টি ইটভাটা নিবন্ধন নবায়ন করেছ। বাকীগুলো নিবন্ধন ছাড়াই অবৈধভাবে চলছে।

তবে ইটভাটা মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ি, জেলার ৯ উপজেলায় দুই শতাধিক ইটভাটা রয়েছে। কিছু ইটভাটা কোন প্রকার নিবন্ধন ও পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে। কাঠপোড়ানোর পাশাপাশি অনেক ইটভাটায় ছোট টিনের ড্রাম চিমনি ব্যবহার হচ্ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি দপ্তরটি জেলার চার উপজেলায় ৯২ টি ইটভাটা শনাক্ত করেছে। এসব ইটভাটায় ১২০ ফুট চিমনিতে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। এর মধ্যে জেলা সদরে ৩৯ টি, ঈশ্বরদীতে ৪৬ টি, ফরিদপুরে ৬ টি ও সাথিয়ায় একটি ইটভাটা রয়েছে। কাঠপোড়ানো এসব ইটভাটার মধ্যে ১৩ টিতে কাঠ ব্যবহারের জন্য করাতকল বসানো হয়েছে। যা সম্পুর্ণ অবৈধ।

গত বুধবার সরেজমিন জেলা সদরের হিমাইতুপুর ইউনিয়নের চর ঘোষপুর, বাঙ্গাবাড়ী ও ভবানীপুর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, জেলা সদর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার গেলেই গ্রামগুলো। বিস্তির্ণ ফসলের মাঠে মধ্যেই একেরপর এক ইটভাটা। ছোট বড় চিমনিতে জ্বলছে ভাটাগুলো। অধিকাংশ ভাটাতেই পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। কিছু ভাটায় করাতকল বসিয়ে কাট কাটা হচ্ছে। কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে আছে চারপাশ। ধোয়ায় আশপাশের গাছপালা ও ফসলের মাঠ বিবর্ণ রূপ নিয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তিনটি গ্রামে ৫০ এর অধিক ইটভাটা থাকায় এলাকাটি ‘৫২ ভাটা’ নামে পরিচিত হয়েগেছে। প্রতি বছর শীতের শুরুতেই একযোগে এসব ইটভাটায় ইটপোড়ানো শুরু হয়। প্রায় চার থেকে পাঁচমাস ইট পোড়ানো চলে। অধিকাংশ ইটভাটা কয়লার পরিবতে কাঠ পোড়ায়। ফলে ইটপোড়ানোর পুরো মৌসুম এলাকাটি কালো ধোঁয়ায় ঢেকে থাকে।

ইটভাটায় কাজকরা শ্রমিকরা জানান, কয়লার চাইতে কাঠ পোড়ানো লাভজনক। কয়লা পোড়ালে ১ হাজার ইট তৈরিতে খরচ হয় প্রায় ১০ হাজার, সে ক্ষেত্রে কাঠ পোড়ালে খরচ হয় ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা। ফলে অধিকাংশ ভাটামালিক কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ান। বড় বড় গাছ ইট ভাটায় এনে করাত কলে কেটে নেন। ফলে সুবিধার্থে ইটভাটাতেই করাত কল বসিয়ে নিয়েছেন।

বাঙ্গাবাড়ী গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম বলেন, ইটভাটা গুলিতে কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানোতে কালো ধোঁয়া হচ্ছে। এতে একদিকে গ্রামের বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন, অন্যদিকে মাফের ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু এসব দেখার কেই নেই।

এ প্রসঙ্গে জেলা বন কর্মকর্তা কাজী তারিকুর রহমান বলেন, ইট তৈরির নিয়ম অনুযায়ী জ্বালানি হিসাবে কাঠ ব্যবহারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এর পরেও বেশিরভাগ ইটভাটা বন বিভাড়ের অনুমতি ছাড়াই অবৈধভাবে কাঠ পোড়াচ্ছে। অন্যদিকে করাতকল বসানোর জন্য বন বিভাগের অনুমোদন প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু ভাটা মালিকরা কাঠ কাটার সুবিধার্থে অবৈধভাবে ইটভাটায় করাতকল বসাচ্ছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, শুধু কাঠ পুড়িয়ে পরিবেশের ক্ষতি নয়, ইট তৈরির জন্য ফসলী জমি কেটে মাটিও নেয়া হচ্ছে। আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি।

জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সহ-সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাদের হিসাব অনুযায়ী জেলায় দুইশতাধিক ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে মাত্র ৩২ টি ইটভাটা কয়লা ব্যবহার করে। বাকীগুলো কাঠ পোড়ায়। বহু ইটভাটা পরিবেশ নিবন্ধন ও পরিবেশ অধিপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই চলে। তবে এসব বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপে আমাদের কোন আপত্তি নেই।

এ প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল গফুর বলেন, অবৈধ ইটভাটা ও কাঠ পোড়ানোর বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। অভিযান অব্যাহত রেখেই সার্বিক বিষয়ে উর্ধতন কতৃপক্ষর কাছে একটি প্রতিবেদনও পাঠানো হয়েছে। নির্দেশনা অনুাযায়ি পরবর্তি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পাবনা জেলা প্রশাসনের ইটভাটা বিষয়ে দায়িত্বরত নাজির মো. ইনসাফ আলী বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং পরিবেশ ছাড়পত্র না থাকায় ইটভাটাগুলোকে লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে না। তবে এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে।


