পেঁয়াজ উৎপাদনের জেলা হিসেবে খ্যাত পাবনা। এই জেলায় চার দিনের ব্যবধানে পাইকারি হাটে পেঁয়াজের দাম নেমে এসেছে প্রায় অর্ধেকে। গতকাল রবিবার (১৭ মার্চ, ২০২৩) প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকায়। যা চার দিন আগে ছিল ৩২০০ থেকে ৩৪০০ টাকা মণ।
জেলার সাঁথিয়া ও সুজানগর উপজেলার কৃষক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রমজান মাসে বেশি দামে বিক্রির আশায় পেঁয়াজ মজুত করেছিলেন। দাম বেশি হওয়ায় সেই পেঁয়াজ এখন বাজারে এনেছেন তারা। আবার কৃষকরাও নতুন পেঁয়াজ বাজারে বিক্রির জন্য তুলেছেন। অন্যদিকে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির খবর রয়েছে। তাতে বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দামের এই দরপতন ঘটেছে বলে মনে করেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুজানগর উপজেলা সদরে প্রতি রবিবার ও বুধবার পাইকারি পেঁয়াজের হাট বসে। গত বুধবার (১৩ মার্চ) এই হাটে প্রতি মণ পেঁয়াজ ৩২০০ টাকা থেকে ৩৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এরপর থেকেই পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। রবিবার (১৭ মার্চ) একই হাটে প্রতি মণ পেঁয়াজ ১৬০০ টাকা থেকে ১৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। দাম কমে যাওয়ায় অনেক কৃষক বিক্রি না করে পেঁয়াজ বাড়িতে নিয়ে গেছেন।
সাঁথিয়া উপজেলার আতাইকুলা হাটেও দেখা গেছে একই চিত্র। রবিবার এই হাটে প্রতি মণ পেঁয়াজ ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখানেও দাম না পেয়ে অনেক কৃষক হতাশ হয়ে বিক্রির জন্য আনা পেঁয়াজ নিয়ে বাড়িতে ফিরে গেছেন।
সুজানগর হাটের পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ বিশ্বাস বলেন, ‘রমজানের শুরুতে বাজারে পেঁয়াজের আমদানি কম ছিল। বেশি দামের আশায় অনেকে পেঁয়াজ মজুত করেছিলেন। রমজান শুরুর পর থেকেই মজুত পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করে। অন্যদিকে, কৃষকেরাও বেশি দামের আশায় অপরিপক্ব পেঁয়াজ হাটে তুলেছেন। আর তাতেই কমে গেছে দাম।’
দাম কমে যাওয়ায় পেঁয়াজ চাষিদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। দাম আরও কমে গেলে লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা।
সুজানগর উপজেলার চরতারাপুরের পেঁয়াজ চাষি রইচ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা তো অনেক আশা করে পেঁয়াজ লাগিয়েছি। উৎপাদন খরচও বেড়ে গেছে। এখন শুনতিছি ভারত থেকে পেঁয়াজ আসবে। আবার সবাই পেঁয়াজ হাটে নিচ্ছে। এরকম হলে তো লোকসান হবে।’
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘হঠাৎ করে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমে গেছে। বর্তমানে যে দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে, তাতেও কৃষকের লোকসান হবে না।’
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে ৯ হাজার ৭৬৫ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজের আবাদ হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৮৮ মেট্রিক টন। এই পেঁয়াজ ইতোমধ্যেই বিক্রি হয়ে গেছে। অন্যদিকে, হালি পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে ৫৩ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে। বর্তমানে এই পেঁয়াজ বাজারে আসছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন।