পাবনা-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী মকবুল হোসেন এমপির বিরুদ্ধে হুমকি ধামকি ও নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ তুলেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল হামিদ মাস্টার। মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) দুুপুরে পাবনার চাটমোহর পৌর সদরে নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন।
বক্তব্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামীলীগ সদস্য আব্দুল হামিদ মাস্টার অভিযোগ করে বলেন, ‘বিভিন্ন ইউনিয়নে বর্ধিত সভা করার নামে নৌকার প্রার্থীর লোকজন নানারকম উস্কানী ও হুমকি-ধামকীমুলক বক্তব্য দিচ্ছেন। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে আমার বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। ইতোপূর্বে নির্বাচনে অনুসন্ধান কমিটির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা এই সভা করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু তা মানা হচ্ছেনা। ’
তিনি বলেন, ‘জেলা সদর থেকে আওয়ামীলীগের কিছু নেতৃবৃন্দ নির্বাচনী এলাকায় এসে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করছেন। তারা বলছেন, এখানে নৌকা ছাড়া কোনো প্রতিক থাকবে না। তারা অশ্লীল ভাষায় আমাকে চরিত্র হনন করে তারা বক্তব্য দিচ্ছেন। এটি নির্বাচনী আচরণ পরিপন্থী কাজ। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি, তারা যেন এসব কর্মকান্ড বন্ধ করে।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল হামিদ অভিযোগ করেন, ‘বর্তমান এমপি ও নৌকার প্রার্থী মকবুল হোসেন নিজেও বিভিন্ন এলাকার লোকজনকে ফোন করে আমার কর্মী-সর্মকদের হুমকি দিচ্ছেন যে, নৌকার ভোট না করলে পুলিশ দিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করিয়ে শায়েস্তা করা হবে। তিনি তার পরাজয় নিশ্চিত জেনে এমন পরিস্থিতি তৈরী করছেন। সেইসাথে প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তাও নৌকার পক্ষে কাজ করছেন। নৌকার লোকজন নিয়ে সভা করছেন। বিষয়টি আমি পুলিশ সুপার মহোদয়কে জানিয়েছি। আশা করি তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’
সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল হামিদ মাস্টার বলেন, ‘চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ৮০ ভাগ কর্মী-সমর্থক আমার পক্ষে আছেন। কারণ বিগত ১৫ বছরে এমপি ও তার ছেলেদের কর্মকান্ডে ফুঁসে উঠেছে মানুষ। এ এলাকার মানুষকে তারা জিম্মি করে রেখেছিল। মানুষ নৌকার বিরুদ্ধে কিংবা আমাদের নেত্রীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন না। অবস্থান নিচ্ছেন এমপি ও এমপি’র ছেলের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী আরো বলেন, ‘আমি বিদ্রোহী প্রার্থী নই, স্বতন্ত্র প্রার্থী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কখনও মিথ্যে কথা বলেন না। তাঁর নির্দেশিত পথেই আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে এবং ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আনতেই আমাদের এই প্রয়াস।’
এমন পরিস্থিতিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের হস্তক্ষেপ কামনা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল হামিদ বলেন, পাবনা-৩ এলাকার ভোটাররা যেন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নিজের ভোট নির্বিঘেœ দিতে পারে সেই সুষ্ঠ পরিবেশ তৈরী করতে হবে। ভোটারদের মধ্যে যেন আতঙ্ক ভয় না থাকে সেদিকে নজর দিতে হবে। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল হামিদ মাস্টারের এসব অভিযোগের বিষয়ে পাবনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মকবুল হোসেন বলেন, ‘পাবনা-৩ আসনে আমাকে নৌকা দিয়েছেন আমার নেত্রী শেখ হাসিনা। আমি বিগত ১৫ বছরে কি করেছি, এলাকার মানুষের জন্য কতটুকু করেছি, তোমরা তা জানো। উনি (স্বতন্ত্র প্রার্থী) যে অভিযোগ করেছেন, তার জন্য তাঁকে বলো, কাকে বা কাদের হুমকি দিয়েছি, তাদের মোবাইল নম্বর নিয়ে তোমরা (সাংবাদিকরা) কথা বলো। অভিযোগ সত্য হলে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিতে বলো।’
তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচনী আচরণবিধি সম্পূর্ণরুপে মেনে চলছি। আমি ঘরে বসে আছি, বের হচ্ছিনা। কেউ দেখা করতে এলে, তাদের বলছি নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলতে।’
এ বিষয়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মু. আসাদুজ্জামান এবং পাবনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার দিকে তাদের একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।
#