প্রেমের ফাঁদে ফেলে কৌশলে ফুঁসলিয়ে সুমাইয়া খাতুন (১৮) নামে এক কলেজছাত্রীকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে লিটন হোসেন (৩৫) নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর মামলা দায়েরের একমাসেও কলেজছাত্রীকে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
সুমাইয়া খাতুন পাবনার চাটমোহর উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের আনকুটিয়া উত্তরপাড়া গ্রামের শুকচাঁদ আলী-সীমা খাতুন দম্পতির মেয়ে এবং চাটমোহর সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। আর অভিযুক্ত লিটন হোসেন (৩৫) একই জেলার ফরিদপুর উপজেলার হাদল ইউনিয়নের মৌদ শালিকাপাড়া গ্রামের কাশেম শেখের ছেলে।
অভিযোগে জানা গেছে, সুমাইয়া খাতুনের মোবাইল ফোন নাম্বার যোগাড় করে তাকে প্রেমের প্রস্তাবসহ কু-প্রস্তাব দেয় লিটন হোসেন। সুমাইয়া রাজী না হওয়ায় তাকে অপহরণের হুমকি দেয় লিটন। বিষয়টি সুমাইয়া তার বাবা-মাকে জানানোর পর তারা অভিযুক্ত লিটনের ছোট ভাই রবিউল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করে তাকে বিষয়টি জানায়। কিন্তু রবিউল ক্ষিপ্ত হয়ে সুমাইয়ার বাবা-মাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও বাড়াবাড়ি করলে প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
এরই মধ্যে গত ৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে সুমাইয়া চাটমোহর সরকারি কলেজে পরীক্ষা দিয়ে বের হলে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা লিটন তার কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে তাকে জোরপূর্বক অপহরণ করে নিয়ে যায়। এ সময় সুমাইয়ার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসার আগেই তারা সিএনজি গাড়ি যোগে দ্রুতপালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় ৩ সেপ্টেম্বর চাটমোহর থানায় সুমাইয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে জিডি করা হয়। জিডি নম্বর ১৮৪। এছাড়া গত ১০ সেপ্টেম্বর সুমাইয়ার মা সীমা খাতুন বাদি হয়ে পাবনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি পিটিশন মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর ৩৩৬/২০২৩। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে চাটমোহর থানার অফিসার ইনচার্জকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ দেয়। এরপর আদালতের নির্দেশে চাটমোহর থানায় মামলা নথিভূক্ত করে। মামলা নং ১১। তারিখ ১১/০৯/২০২৩।
মেয়েকে হারিয়ে পাগলপ্রায় কলেজছাত্রী সুমাইয়ার বাবা শুকচাঁদ আলী ও মা সীমা খাতুন। তারা বলেন, ‘আমরা অভিযুক্ত লিটনের বাড়িতে গেছি, তাদের পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলেছি। কিন্তু তারা আমাদের মেয়েকে ফিরিয়ে দেয়নি বা তার সন্ধান দেয়নি। উল্টো নানারকম হুমকি ধামকি দিয়েছে। এলাকার লোকজন জানিয়েছে ছেলেটা ভাল নয়, সে আগেও এরকম ঘটনা ঘটিয়েছে। মেয়েটা কোথায় আছে, কেমন আছে জানি না। আমাদের ধারণা, সুমাইয়াকে অপহরণ করে কোথাও পাচার করে দিয়েছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অনুরোধ, আমরা আমাদের মেয়েকে ফিরে চাই।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চাটমোহর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুস সালাম বলেন, ‘মামলার পর আমরা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধারের চেষ্টা করছি। এখনও লিটনকে গ্রেপ্তার বা মেয়েটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। আশা করছি তাকে উদ্ধার করতে সক্ষম হবো।’
এদিকে, অভিযুক্ত লিটন হোসেন পলাতক থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার বাবা-মা মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না। লিটনের ভাই রবিউল ইসলামের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সুমাইয়ার বাবা শুকচাঁদ আলী বলেন, ‘যদি সহৃদয়বান ব্যক্তি কেউ আমার মেয়ে কিংবা অভিযুক্ত ছেলের তথ্য প্রমাণ সহ সন্ধান দিতে পারেন তাহলে তাকে উপযুক্ত পুরস্কার দেয়া হবে। তার ০১৩০৪-১১৫৩৮১ এই নাম্বারে যোগাযোগের অনুরোধ করেছেন তিনি।